জমায়েত: পাইকর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গ্রামবাসীা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
চিকিৎসার গাফিলতিতে কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগে পাইকরের মুরারই ২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাণ্ডব চালালেন রোগীর পরিজনেরা। তার জেরে মঙ্গলবার সকাল দশটার পরে ঘণ্টা চারেক সমস্ত রকমের পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ কার্তিক পাত্রের দাবি, ওই কিশোরকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরিজনদের সে কথা জানানো হলেও তাঁরা সে কথায় কান দেননি। বিকেল পর্যন্ত কোনও তরফেই কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তেজিত জনতার সংখ্যা বেশি থাকায় প্রথমে পাইকর ফাঁড়ি ও মুরারই থানার পুলিশ গিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। নলহাটি থানার পুলিশ সহ রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক মিতুন দাসের নেতৃত্বে বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক জনের দাবি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুরারই থানার কুতুবপুর গ্রামের পেশায় প্যান্ডেল ব্যবসায়ী কুদরত শেখের ১৩ বছরের ছেলে হিমাজুদ্দিনকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এ দিন সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন।
কুদরতের অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসক ছেলেকে এক মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষা করে মৃত বলে জানিয়ে দেন।’’ এর পরেই চিকিৎসকের গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। জরুরি বিভাগের রোগীর শয্যা, অন্য আসবাব, ইনভার্টার, চারটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ভাঙচুর করা হয়। বাদ যায়নি হাসপাতালের কর্মী আবাসনের জানালা-দরজাও। স্থানীয় সূত্রের খবর, কুতুবপুর, পাইকর, হিয়াতনগর, কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ এর সঙ্গে যুক্ত।
চিকিৎসায় ত্রুটির অভিযোগ মানতে চাননি মুরারই ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ কার্তিক পাত্র। তাঁর দাবি, ‘‘রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা করা হয়েছিল। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক অবশ্য পরীক্ষা করে দেখেন ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরের। ময়না-তদন্ত না করেই মৃতদেহ নিয়ে পরিজনেরা বাড়ি চলে যান। মিনিট চল্লিশেক পরে হাসপাতালে এসে তাণ্ডব শুরু করে। অথচ, ইসিজিতেও মৃত বলে রিপোর্ট এসেছে।’’ হাসপাতালের কর্মীরা জানান, গেট বন্ধ করে দিয়েও তাণ্ডব রোখা যায়নি। উত্তেজিত জনতা লাঠি, বাঁশ, পাইপ নিয়ে হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে জরুরি বিভাগ, কর্মী আবাসে ভাঙচুর করে। সমস্ত ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বিএমওএইচ।
এর মাঝে এ দিন চার ঘণ্টা রোগীরা কোনও পরিষেবাই পাননি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৩০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে নার্স, কর্মীর অভাব থাকার পরেও বর্হিবিভাগে দৈনিক ৪০০ জন রোগী দেখা হয়। এ ছাড়া দৈনিক ৩০ জন মহিলার স্বাভাবিক প্রসব হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোজ ৩০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে রাজ্যের মধ্যে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুরস্কারও পেয়েছে। হাসপাতালের এক আধিকারিকের আক্ষেপ, ‘‘অকারণে গোলমালের জন্য এ দিন রোগীরা পরিষেবা পেলেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেও সময় লাগবে। ভোগান্তি তো সেই রোগীদেরই হল!’’