পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে চাষিরা যখন সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছিলেন, সেই মোক্ষম সময়েই ব্যাট ধরল বর্ষা।
কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, শনিবার রাত থেকে রবিবার দিনভর, সব মিলিয়ে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন চাষিরাও। নীলাম্বর কুইরি, যুধিষ্ঠির মাহাতোদের মতো চাষিরা এক মুখ হাসি নিয়ে বলছেন, ‘‘আমন ধানের চারা সামান্য বেরিয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছিল। এই বৃষ্টিতে সেগুলো বেঁচে গেল।’’
এক সময় মনে হয়েছিল, এ বার আমন ধানের চাষে রাজ্য বোধ হয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না। এই ক’দিনের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি দেখে অনেকেই মনে করছেন আমন চাষের লক্ষ্যপূরণ করতে ততটা অসুবিধা হবে না। জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, ‘‘এই বৃষ্টি অবশ্যই চাষিদের মুখে হাসি ফোটাল। প্রথমত বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। ফলে চারা যেগুলি বের হয়েছিল বা এখনও বের হয়নি দুই ক্ষেত্রের জন্যই এই বৃষ্টি আশির্বাদ।’’
বস্তুত, টানা বৃষ্টি না হওয়ায় পুরুলিয়ার মতো শুখা জেলায় নামতে শুরু করেছিল জলস্তর। ক্ষতি মুখে পড়েছিল চাষও। জলের অভাবে ধানের ছোট ছোট চারা হলুদ হয়ে যাচ্ছিল। এই বৃষ্টিতে সেই চারাগুলো পুষ্ট হবে। আরও একটা উপকার হবে— বহু চাষি ইতিমধ্যেই জমিতে লাঙল দিয়েছেন। তার ফলে জমিতে জল জমে থাকবে। গড়িয়ে চলে যাবে না। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘এ বারে ২,৭৩,০০০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বৃষ্টি ঠিকঠাক হলে ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অসম্ভব নয়।’’
এই বৃষ্টিকে আশির্বাদ হিসেবে দেখছেন চাষিরাও। পুরুলিয়া ১ ব্লকের মাঙ্গুড়িয়া গ্রামের পঙ্কজ সিংহের কথায়, ‘‘এই বৃষ্টিতে বীজতলাটুকু বাঁচাল। কয়েক দিনের মধ্যে আরও বৃষ্টি প্রয়োজন। তা হলে সকলেরই উপকার।’’ অনেকের মতে, এই বৃষ্টি উঁচু বা বাইদ জমিতে যেখানে ডালশস্য লাগানো রয়েছে তার জন্যেও ফলদায়ক হবে। মিটবে জলের চাহিদা।
পুরুলিয়া ১ ব্লকের মাঙ্গুড়িয়া গ্রামের স্বপন মাহাতো বা ঝালদার পুস্তি গ্রামের বিদেশি কুইরিরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আগের বছর বৃষ্টি হয়নি। চারা বোনার পর সব ধান জলের অভাবে জমিতেই শুকিয়ে গিয়েছিল। এ বারও শেষ বৃষ্টি হয়েছিল জুনের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই জলসেচ করে বীজ বুনেছিলেন। তারপর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল না। তার ফলে রোদে আফরের ফোঁড় বা ছোট্ট যে চারা বেরিয়েছিল তা মরে যাচ্ছিল। গত দু’দিনের বৃষ্টিতে জেগে উঠেছে সে সব চারা। তাতেই চওড়া হয়েছে হাসি।