জেলায় অফিস না থাকলে কাজ হোক অনলাইনে

এ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা বিজয় ভারতী।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪২
Share:

আলোচনা: সিনার্জি-র মঞ্চে। নিজস্ব চিত্র

বছর দেড়েক আগে প্রথম সিনার্জি থেকে জেলায় প্রায় সাড়ে ছ’শো কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল। নতুন বছরের শুরুতে, সোমবার পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে ফলো-আপ সিনার্জি থেকে ১০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব এল। প্রশাসনের দাবি, গত শিল্প সম্মেলনে বিনিয়োগের যত প্রতিশ্রুতি মিলেছিল তার অনেকটাই চলে এসেছে। তবে শিল্পপতিদের একাংশ প্রতিশ্রুতি মতো পরিকাঠামো তৈরি হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

এ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা বিজয় ভারতী। জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার ধুর্জটিপ্রসাদ বসু জানান, গত সম্মেলনে প্রায় ৬৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল। তার মধ্যে ৬১৮.৪৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। রঘুনাথপুরের নিতুড়িয়ার গোবাগে একটি সিমেন্ট তৈরির সংস্থা ছ’শো কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। বাকি ১৮.৪৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়ে উৎপাদনও শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ছাইইট, প্লাস্টিক, পোলট্রি ফিড, সিলিকা পাউডার, অক্সাইডের মত কেমিক্যাল প্রভৃতির কারখানা। এ বারের সম্মেলনে সোলার প্যানেল, ধানকল-সহ বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে।

তবে আগের সম্মেলনে পুরুলিয়া শহরের অদূরে পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রায় ২১ একর জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কতদূর অগ্রগতি? জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘ছড়রার ইন্ডাস্টিয়াল পার্কের জমি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে। কাজ শেষের দিকে। শীঘ্রই ছাড়পত্র মিলবে।’’

Advertisement

২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের প্রকল্প হলেও কাশীপুরের বেল মেটাল শিল্পের ডিপিআর এখনও প্রস্তুত হয়নি। বলরামপুরে লাক্ষা ডেভেলপমেন্ট সেন্টার গড়ার বিষয়টি জমি জটে প্রায় সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে। বৈঠকে জেলাশাসক জানিয়েছেন, সমস্যা মেটাতে শীঘ্রই বৈঠকে বসা হবে। অধিকর্তা জানান, লাক্ষা ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের বিষয়টির অগ্রগতির জন্য দফতরের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হবে।

জেলায় ছাইইট কারখানার বেশ কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু ছাইইটের গুণমান নির্ধারণের পরীক্ষাগার না থাকায় সমস্যা মিটছে না। দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার দফতরও নেই জেলায়। বণিকসভার প্রতিনিধিদের মতে, এই কাজগুলির অগ্রগতি আরও দ্রুত হওয়া দরকার। এ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত বণিকসভার এক প্রতিনিধি ভৈরবদাস মল বলেন, ‘‘কাজ যে কিছুই হয়নি তা নয়, তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি হওয়া উচিত। এই সম্মেলন প্রায় দেড় বছর পরে হচ্ছে। কোথায় সমস্যা, কেন সমাধান হচ্ছে না— এই সব নিয়ে নিদেন পক্ষে নিয়মিত বৈঠকটা করা দরকার।’’ ব্যবসায়ীদের সমস্যা মেটাতে অধিকর্তা এ দিন বলেছেন, ‘‘যে সমস্ত দফতরের এখানে অফিস নেই তাঁরা প্রয়োজনীয় কাজ অনলাইনে করুন।’’

ছাইইট তৈরি হলেও সরকারি স্তরে সেগুলির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের মাধ্যমে যে কাজ হচ্ছে তার ভেটিং-এ ছাইইট ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন ইনসেন্টিভ দেওয়া হয়, কাজের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ছাইইট ব্যবহার করলে ইনসেন্টিভ দেওয়া যেতে পারে।’’ ছাইইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানসিক দ্বিধা কাটানোর কথা বলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।

এ দিনের সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা বলেন, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষের প্রকল্প দিন। খতিয়ে দেখা হবে। যদি বাঁকুড়ায় হতে পারে, এখানে কেন নয়?’’ পুরুলিয়ায় ধানকল কম রয়েছে বলে উল্লেখ করে এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথাও বলেন তিনি। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগ হলে দফতর প্রশিক্ষকের ব্যবস্থাও করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুরুলিয়ায় পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে আরও বিনিয়োগের কথা বলেন জেলাশাসক।

মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার বলেছেন, দক্ষিণবঙ্গে শিল্পের ব্যাপারে সরকারের কাছে রঘুনাথপুর এলাকা হল পাখির চোখ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জন্য সেখানে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। সম্মেলনে জানানো হয়েছে, জাতীয় স্তরের শিল্পের জন্য ওই পার্ক ব্যবহার করার কথা বিবেচনায় রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন