পোড়া মাছ, মদ উপাচার ক্যাওটে-কালী পুজোয়

পুরুষানুক্রমে ওই পুজো করছেন বহড়া গ্রামের মণিমোহন চক্রবর্তী, কাশীনাথ চক্রবর্তীরা। তাঁরা বলেন, ‘‘কেন মদ আর পোড়া মাছ পুজোয় দেওয়া হয় তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৯
Share:

ভক্তি: ক্যাওটা-কালী পুজোর জন্য মাছ ধরার জাল নিয়ে মন্দিরে মৎস্যজীবীরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

মদ আর গোটা পোড়া মাছ। ফলমূল, ফুল-বেলপাতার পাশাপাশি ময়ূরেশ্বরের ডাঙ্গাপাড়া ধীবরপাড়ার ক্যাওটে-কালী পুজোর অন্যতম উপাচার সে গুলিও। বছরের পর বছর ধরে ওই উপাচারেই পূজিত হন দেবী।

Advertisement

কথিত রয়েছে, বছর পঞ্চাশ আগে আজই জাল পুজোয় মদ, গোটা পোড়া মাছের উপাচারে ক্যাওটে-কালী পুজোর প্রচলন করেন প্রয়াত কানিকুড়ো ধীবর। ধীবর তথা মৎস্যজীবীরা স্থানীয় ভাবে ক্যাওট নামেও পরিচিত। সেই সূত্রেই তা ক্যাওটে-কালী পুজো হিসেবে চিহ্নিত হয়। কানিকুড়ো ধীবরের বড় ছেলে কাশীনাথ, মেজ ছেলে অজিত ধীবর বলেন— ‘‘ফলমূল বা ফুল-বেলপাতা বেশি না থাকলেও হয়, কিন্তু মদ আর গোটা পোড়া মাছের উপাচার ছাড়া ওই পুজো হয় না।’’

পুরুষানুক্রমে ওই পুজো করছেন বহড়া গ্রামের মণিমোহন চক্রবর্তী, কাশীনাথ চক্রবর্তীরা। তাঁরা বলেন, ‘‘কেন মদ আর পোড়া মাছ পুজোয় দেওয়া হয় তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না। মনে হয়, ধীবরদের জীবিকার সঙ্গে ওই উপাচারের কোনও যোগসূত্র রয়েছে। এক সময় শীতের সঙ্গে লড়তে মাছ পোড়া, মদ খেয়ে জলাশয়ে নামতেন ধীবররা। সেটাই তাঁদের পছন্দ ছিল। আর পছন্দের জিনিসই তো মানুষ দেবতাকে নিবেদন করে।’’

Advertisement

এক দিনের ওই পুজো ঘিরে উৎসব গোটা পাড়ায়। গীতারানি ধীবর, তাপসী ধীবর, শেফালি ধীবর বলেন— ‘‘পুজোয় বাড়িতে পরিজনরা আসেন। সামিল হয় পাড়ার লোকেরাও। সবাইকে নিয়ে চলে পংক্তিভোজন।’’ ভবানী ধীবর, শিবানী ধীবর, পদ্মা ধীবর বলেন, ‘‘দুর্গাপূজোয় বাপের বাড়ি আসা হোক বা না হোক, কালীপুজোয় আসবোই।’’ একই কথা বললেন মামনি ধীবর, সুরেশ ধীবরও। তাঁরা বলেন, ‘‘কালীপুজোয় নতুন জামাকাপড় কিনি। ভালো খাওয়াদাওয়াও হয়।’’

ক্যাওটে-কালী হিসেবে পরিচিত হলেও কিন্তু শুধুমাত্র মৎস্যজীবীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই ওই পুজো। দূরদূরান্তের মানুষও পুজো দিতে ভিড় জমান। ডাঙাপাড়ার মাধবী দাস, লোকপাড়ার শঙ্করী দলুই বলেন, ‘‘পুরুষানুক্রমে আমরাও পুজো দিতে আসি।’’ শুধু ক্যাওটে-কালীই নয়, মিরিটির জলকুমড়ি-সহ অনেক জায়গায় জাল পুজোয় মদ আর গোটা পোড়া মাছ উপাচার হিসেবে দেওয়ার রীতি রয়েছে। এ দিন জেলেরা শুধু এক বেলা মাছ ধরেন। জাল পরিষ্কার করে শুকিয়ে পুজো দেন। কোথাও গ্রামের কোনও দেবস্থানে, কোথাও বাড়িতেই ঘট বসিয়ে পূজো করা হয়।

লাভপুরের মিরিটিতে জলকুমড়ি হিসেবে একটি শিলাখণ্ড একই উপাচারে পূজিত হয়। হরিসাধন বাগদি, বিশ্বনাথ বাগদি বলেন, ‘‘বাপ-ঠাকুরদাদের মুখে শুনেছি, এক সময় মাছ ধরতে গিয়ে জেলেদের কুমীরের কবলে পড়তে হতো। সেই জন্যই জলাশয়ে নামার আগে পোড়া মাছ আর মদ দিয়ে কুমিরের পুজো দিতে হতো। সেটাই হয়তো এখনও জলকুমড়ি পুজোয় চলে আসছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন