পুরভোটে শিক্ষকদেরও প্রচারে কাজে লাগাবে বীরভূম জেলা তৃণমূল। তবে, শুধু প্রচারই নয় ভোটে জিতলে তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের ওয়ার্ড কমিটিতে ঠাঁই দেওয়ার ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার বোলপুর পুরসভার উৎসর্গ মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভায় এই ভাবনার কথা জানিয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ওই সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রলয় নায়েক পরে নিজেই বলেছেন, “পুর-এলাকায় নাগরিক পরিষেবা আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, পুর-বাসিন্দাদের দৈনিক পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়কে আরও উন্নত কী ভাবে করা যাবে, সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সদস্য হিসেবে রাখা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।’’
এ দিনের সভায় সিউড়ি, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া ও বোলপুর— এই চারটি পুরসভার একহাজারের বেশি মাধ্যমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাজির ছিলেন কর্মী সভায়। ছিলেন ওই শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি আতঙ্কভঞ্জন ভোল, রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রমুখ। ছিলেন আশেপাশের জেলার দলের শিক্ষক সংগঠনের সভাপতিরাও। জেলার চারটি পুরসভার ভোট নিয়েই জোর আলোচনা হয় ওই সভায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই সভাতেই মোটামুটি স্থির হয়ে গিয়েছে, জেলার সব পুরসভার ওয়ার্ড কমিটিতে ওই পুর-এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জায়গা দেওয়া হবে। জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এলাকায় পরিচিত অনেকের চেয়ে বেশি। তাঁরা বাড়ির হেঁশেল পর্যন্ত ঢুকতে পারেন। পুরভোটের আগে তাঁদের সুচিন্তিত মতামতকে কাজে লাগানোটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’ ওই সভায় থাকা একাধিক শিক্ষকও বলেন, ‘‘শিক্ষক সংগঠনের সদস্য-সদস্যাদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার কর্মসূচিতে যোগদান থেকে শুরু করে স্ট্রিট কর্নার, পথসভার ওপর জোর দিতে আলোচনা হয়েছে সভায়। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ফিরিস্তি নিয়ে দরজায় দরজায় গিয়ে ভোট চাওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’’
বাম জমানায় এ রাজ্যে ভোট বাক্স ভরাতে শিক্ষকদের সংগঠনের কাজে ব্যবহার সুবিদিত। এক সময় রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বেছে বেছে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের পঞ্চায়েত প্রধানের পদে বসিয়েছে বামেরা। ভোট প্রচার থেকে মায় এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সংগঠনের মিছিল-মিটিঙেও তাঁদেরই দেখা যেত প্রথম সারিতে। বস্তুত, রাজ্য রাজনীতির গতিপ্রকৃতির বিষয়ে ওয়াকিবহালরা জানাচ্ছেন, একটা সময় নির্বাচনে বিশেষ করে পঞ্চায়েত ভোটে শিক্ষকদের কাজে লাগানোটা সিপিএম তথা বামফ্রন্ট কার্যত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরেই প্রার্থী করা হত প্রাথমিক ও হাইস্কুলের শিক্ষকদের। পাশাপাশি শিক্ষকরা পেতেন দলের লোকাল বা জোনাল কমিটির সদস্যপদও। স্থানীয় রাজনীতিতে সেই শিক্ষকদের দাপট ছিল দেখার মতো। পাশাপাশি, স্কুলে শিক্ষকতা করার সুবাদে ভোটের সময় এলাকায় আলাদা করে জনসংযোগ করার প্রয়োজনও তেমন প্রয়োজন পড়ত না।
কিন্তু, ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, শিক্ষকদের আর প্রার্থী করা হবে না। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের ব্যতিক্রম ঘটেছিল। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে সেই সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত মেলে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে। খোদ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “শিক্ষকদের পুরোপুরি ভোট থেকে বাদ দেওয়া ঠিক বলে মনে করি না।” প্রাথমিক শিক্ষকদের পুরো বাদ দেওয়া যাবে না বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
সেই ঐতিহ্যই কি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল?
অনুব্রত মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘বামেরা কী করেছে আমি জানি না। প্রাথমিক ভাবে আমরা ঠিক করছি। পুরভোটের পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। উন্নয়নকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’