দিনভর বৃষ্টি, সঙ্গী ঝোড়ো হাওয়া
crops

heavy rainfall: অল্প দিনের ধানে ক্ষতির ভয় বাঁকুড়ায়

প্রবল বৃষ্টি আর সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় বাঁকুড়া জেলার নানা প্রান্তে মুখ থুবড়ে পড়েছে অল্প দিনের ধান। বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আনাজ চাষিরাও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:০১
Share:

শেষ চেষ্টা। বিষ্ণুপুর ব্লকের উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের পানরডাঙর গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

আর দু’-এক দিন সময় পেলেই ধান উঠে যেত বলে দাবি। কিন্তু মঙ্গলবার মাঝরাত থেকে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে কার্যত তা মাঠেই ‘মারা’ গেল। প্রবল বৃষ্টি আর সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় বাঁকুড়া জেলার নানা প্রান্তে মুখ থুবড়ে পড়েছে অল্প দিনের ধান। বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আনাজ চাষিরাও।

Advertisement

বাঁকুড়া রিজ়িয়নের যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “মরসুমে এ পর্যন্ত ১১৭ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ধান জলে ডুবে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে। জল জমে ক্ষতি হতে পারে আনাজেরও।”

এ দিন পাত্রসায়রের শালখাঁড়া, শালখাঁড়া চর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, একেবারে নুইয়ে পড়েছে পাকা ধান। কোথাও আবার জলে ডোবা খেতে উঁকি মারছে ধানের ছড়া। শালখাঁড়া গ্রামের রাম দুয়ারি, সুশান্ত বিশ্বাসদের কথায়, “ধান পেকে গিয়েছিল। কাটার সময় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঝড়ে সব ধান জলে পড়ে রয়েছে। এ ভাবে থাকলে, ধান অঙ্কুরিত হয়ে যাবে। প্রচুর ক্ষতি হয়ে যাবে।” তাঁদের আক্ষেপ, “ফলন ভাল হয়েছিল। কিন্তু অর্ধেক ফসলও বাড়িতে তুলতে পারব না।”

Advertisement

একই ছবি বিষ্ণুপুরের মড়ার, খড়কাশুলি, আমডহরা গ্রামেরও। পানরডাঙর গ্রামের কৃত্তিবাস যোগী বলেন, “আর এক দিন সময় পেলেই ধান কেটে নিতে পারতাম। ধান তো গেলই, আলু লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।” আমডহরা গ্রামের আনাজ চাষি মইনুদ্দিন খান জানান, আনাজের প্রচুর ক্ষতি হয়ে যাবে। জমির মাটি আর জল টানছে না। গোড়াপচা রোগ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। কপি, ঝিঙে, পটল, শিমের ফলন অনেক কমে যাবে।

ক্ষতির আশঙ্কায় ফুল চাষিরাও। পানরডাঙর গ্রামের এক ফুলচাষি ভৈরব হাত বলেন, “ক’দিনে যা বৃষ্টি হল, এ ভাবে চলতে থাকলে পুজোর মরসুমে ফুলের জোগান দেওয়া যাবে না। গাছ নষ্ট হয়ে যাবে।”

বিষ্ণুপুর মহকুমার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) অমিতাভ পান্ডে বলেন, “এ বৃষ্টিতে চাষে ক্ষতির আশঙ্কা যথেষ্টই। আনাজ চাষিদের বৃষ্টি থামলে দ্রুত কপারঘটিত ছত্রাকনাশক গাছের গোড়া ঘেঁষে প্রয়োগ করতে হবে। বিষ্ণুপুরের জনতা, লয়ার, সোনামুখী, পাত্রসায়র, ইন্দাসের যে সব জায়গায় আগাম শীতের আনাজ চাষ হয়, সেখানে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। অতিবৃষ্টিতে মাটির জল টানার ক্ষমতাও কমছে, যা আনাজ চাষের উপযুক্ত নয়।”

পুরুলিয়ার ছবিটা যদিও তুলনায় ভাল। এ দিন বিকেল পর্যন্ত জেলা জুড়ে যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ধান চাষে তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছে জেলা কৃষি দফতর। মঙ্গলবার জেলা জুড়ে গড়ে ১৫ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছিল। এ দিন দুপুর পর্যন্ত জেলায় গড়ে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জাহাজপুর কল্যাণ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা যায়।

জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্ত জানান, যতটা বৃষ্টি হয়েছে, তা ‘বাইদ’ অর্থাৎ উঁচু জমির জন্য সহায়ক হবে। ‘কানালি’ (সমতল) বা ‘বহাল’ (নিচু) জমির ধানেও এ বৃষ্টি তেমন প্রভাব ফেলবে না। ঝোড়ো হাওয়া বইলেও তাতে ধান পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছে কৃষি দফতর। তবে আনাজ খেতে জল জমলে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা উদ্যানপালন দফতরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন