প্রশাসনের আশ্বাসে উঠল ট্রাক ধর্মঘট

তাঁদের দাবিগুলি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে, প্রশাসনের এমন আশ্বাসে  লরি, ডাম্পার না চালানোর ‘সিদ্ধান্ত’ থেকে সরে দাঁড়াল বীরভূম ট্রাক ও ডাম্পার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৬
Share:

মতবিনিময়: পাথর, বালি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

ওভারলোডিং করলে জেল এবং জরিমানা করা হবে। যান অনুযায়ী নির্দিষ্ট ওজনের অতিরিক্ত বহন বন্ধে এমনই কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সিউড়িতে জেলা প্রশাসনের কনফারেন্স হলে পাথরখাদান ও ক্রাশারমালিক, বালি ঘাটের লিজপ্রাপ্ত, পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত লরি ও ডাম্পার মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। অন্য দিকে তাঁদের দাবিগুলি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে, প্রশাসনের এমন আশ্বাসে লরি, ডাম্পার না চালানোর ‘সিদ্ধান্ত’ থেকে সরে দাঁড়াল বীরভূম ট্রাক ও ডাম্পার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রশান্ত অধিকারী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি এবং জেলা পরিবহণ দফতর, পূর্ত (সড়ক) ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। প্রশাসনিক কর্তাদের স্পষ্ট বার্তা, ওভারলোডিং-এর জন্য সেতু দূর্বল হচ্ছে। রাস্তা খারাপ হচ্ছে। দুর্ঘটনা বাড়ছে। স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে রাস্তা ঘেঁষে থাকা স্কুলগুলিতে। বাড়ছে দূষণও। এক শ্রেণির মানুষের মুনাফার জন্য সমাজের, সরকারের, দেশের এত বড় ক্ষতি করা চলবে না। নিয়ম মেনে চলুন না হলে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে প্রশাসন।

Advertisement

কলকাতায় মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে রাজ্যের দূর্বল সেতু নিয়ে চর্চা শুরু হতেই সেতুগুলির উপর দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ওজনের যানবাহনের যাতায়াতের দিকে আঙুল উঠেছিল। ওভারলোডিং নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলায় কমবেশি ১০টি ক্ষতিগ্রস্থ ও দুর্বল সেতুর জন্য শয়ে শয়ে পাথর ও বালি বোঝাই (ওভারলোডেড) লরি ডাম্পারের যাতায়াত দায়ী করেছিলেন পূর্ত ও জাতীয় সড়কের কর্তারা। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই সব পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। কেন ওভারলোডিং বেআইনি তা বোঝান জেলাশাসক। নিয়ম না মানলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘রাস্তায় কোনও ওভারলোডেড যান ধরা পড়লে গাড়ির মালিক ও যানটির বিরুদ্ধে মামলা হবে।’’ প্রশাসনের মনোভাব দেখে নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোয় সায় দেন সকলেই।

অন্য দিকে তাঁদের প্রতি প্রশাসনিক ‘জুলুম’ ও ‘হেনস্থা’-র প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লরি, ডাম্পার না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বীরভূম ট্রাক ও ডাম্পার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের দাবি ছিল, অনুমতি ছাড়া ভূগর্ভস্থ কিছু তোলা যাবে না, এই আইনি জটিলতায় কাগজে কলমে বন্ধ রয়েছে জেলার সিংহভাগ খাদান, ক্রাশার। কিন্তু বাজারে পাথরের চাহিদা এবং এলাকার মানুষের রুজিরুটির জন্য খোলা রয়েছে প্রায় সব খাদানই। ফলে পাথর বহনের সঙ্গে জুড়ে থাকা লোকজন সবাই কাজে নিযুক্ত। কিন্তু এই ‘বেআইনি’ কারবারের জন্য জরিমানা ও ওভারলোডিং ঢাল করে টাকা লুঠ করা হচ্ছে। প্রশাসন অবশ্য অভিযোগ মানেনি। ধর্মঘট কতটা সফল সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তবে ওভারলোডিং তাঁরা করবেন না সে কথা জানানোর সঙ্গে এ দিন প্রশাসনের কাছে এক গুচ্ছ প্রস্তাব রেখেছেন বীরভূম ট্রাক ও ডাম্পার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের দাবি, গড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, নির্ধারিত ওজনের থেকে বেশি ওজন বহন করছেন কিনা, অবৈধ পাথর বহনের জন্য সঠিক জরিমানা দিয়েছেন কিনা সে সব প্রশাসন ও পুলিশ যাচাই করুক। তবে সেটা রাস্তায় লরি, ডাম্পার দাঁড় করিয়ে নয়। যাচাই পর্ব শেষ হোক পাঁচামি, শালবাদরা, নলহাটি, রামপুরহাট ও রাজগ্রামের পাথর শিল্পাঞ্চলে ঢোকা এবং বেরোবার মুখেই। তা হলে রাস্তায় হেনস্থা হতে হয় না। বীরভূম ট্রাক ও ডাম্পার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবাশিস পাল বলছেন, ‘‘আমাদের এই প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। তাই সরে এলাম সিদ্ধান্ত থেকে।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘ভাল প্রস্তাব। ওঁদের দেখানো জায়গা পরিদর্শন করা হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তার পরেই সিদ্ধান্ত হবে। তবে অতিরিক্ত পাথর, বালি বহন চলবে না।’’ পাথর শিল্পাঞ্চল বাঁচাও কমিটির সম্পাদক কমল খান জানান, ‘‘সকলের স্বার্থের কথা ভেবেই প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন