অভ্যাসে মেলায় ভিড় গ্রামবাসীদের

শেষ হয়েছে শান্তিনিকেতন পৌষমেলার নির্ধারিত সময়সীমা। যদিও শনিবারও চলল বিকিকিনি। ভিড়ও রয়েছে ভালই। যাঁরা বিক্রি করছেন মূলত তাঁরা প্রান্তিক ব্যবসায়ী। রয়েছেন কিছু শীতবস্ত্র বিক্রেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৪
Share:

কেনাকাটা: পৌষমেলা শেষ হওয়ার দু’দিন পরও মেলার মাঠে ভিড় মানুষের। শনিবার শান্তিনিকেতনে। —নিজস্ব চিত্র।

পৌষমেলা যেন ‘শেষ হয়েও হলো না শেষ’।

Advertisement

শেষ হয়েছে শান্তিনিকেতন পৌষমেলার নির্ধারিত সময়সীমা। যদিও শনিবারও চলল বিকিকিনি। ভিড়ও রয়েছে ভালই। যাঁরা বিক্রি করছেন মূলত তাঁরা প্রান্তিক ব্যবসায়ী। রয়েছেন কিছু শীতবস্ত্র বিক্রেতা। বাইরের পর্যটক আর নেই বললেই চলে। তার বদলে আসছেন আশেপাশের গ্রামীণ এলাকার মানুষ। মেলা যে ছ’দিনের, ভাঙা মেলা আর থাকবে না— এই বার্তা তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি। প্রতি বছর তাঁরা এই সময়েই আসেন। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড়ে তাঁদের খুব একটা দেখা যায় না। বরং সবাই যখন ফিরে যান আসেন তখন। তাঁদের কথায়, ‘‘জিনিসের দাম যখন কিছুটা কমে যায়, তখনই আসি। যে টুকু পড়ে থাকে সেগুলির কিছু কিছু কিনে নিয়ে যেতে। তা বাড়ির ছোটদের জন্য পুতুলই হোক বা সংসারের টুকিটাকি জিনিস।’’

এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। তাই বাসস্ট্যান্ডে বাস এসে থামলেই ঝাঁকে ঝাঁকে তাঁরা নামছেন। অবশ্য যে হাসিমুখ নিয়ে মেলায় এসেছেন, মেলা দেখে কিছুটা হতাশই হয়েছেন অনেকে। বোলপুরের পাশের গ্রাম রাওতারা থেকে এসেছিলেন বছর ষাটের প্রৌঢ় জনার্দন পাল, সঙ্গে তাঁর পুরো পরিবার। পেশায় কৃষিজীবী। শীতবস্ত্র কিনতে কিনতে একসময় দোকানিকেই বলে ফেললেন, ‘‘বিশ্বভারতী এটা কী করলো? এক বারও আমাদের কথা ভাবলো না।’’ উত্তরও দিলেন ওই শীতবস্ত্র ব্যবসায়ী, ‘‘না দাদু, এতে বিশ্বভারতীর কোনও দোষ নেই যে। ওই যে কী নিয়ম হয়েছে না, তার জন্যই তো সবাইকে তুলে দিচ্ছে, আমিও চলে যাব দুপুরের পরেই।’’ জনার্দনবাবু উদাহরণমাত্র। এরকম আশেপাশের শয়ে শয়ে গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন পৌষমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর। ভাঙা মেলা দেখতে, জিনিস কিনতে। অগ্রহায়ণ মাসে ধান তোলার পর নবান্ন হয়। তারপর ধানের ঝাড়াই-মারাই করার পর তা বিক্রি করে টাকা পেতে পেড়িয়ে যায় পৌষেরও প্রথম দু’টো সপ্তাহ। তারপরই হাতে কয়েকটা টাকা পেয়ে তাঁরা আসতেন পৌষমেলায়। তত দিনে জিনিসের দামও একটু কমে আসতো। এত দিনের অভ্যাসে তাঁরা এবছরও এসেছেন, ঠিক যেমন গত বার এসেছিলেন। ক্রেতা আসলে তো বিক্রেতা থাকবেনই, তাই রয়ে গিয়েছেন তাঁরাও। বিক্রিও হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের দু’দিন পরও। হয়তো এরকম করতে করতেই তাঁরাও এক দিন জেনে যাবেন মেলাটা শুধুমাত্র ছ’দিনের। নবান্নের ধান বিক্রি করে মেলার জন্য তুলে রাখবেন তাঁরা। এক দিন আসবে যখন মেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে মিশবেন প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারাও।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন