স্মৃতিচারণ: এই থালাতেই খান অটলবিহারী। পাশে কৌশিক। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন আচার্যও ছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতি তা-ই ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বভারতীতে। ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুর পরে সে সব স্মৃতির কথাই ভাসছে বিশ্বভারতীতে।
২০০১ সালে অটলবিহারী তখন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন সুজিত বসু। তিনি জানান, সমাবর্তনের সমস্ত আয়োজন প্রায় শেষ মুহূর্তে। ঠিক তার ৭২ ঘন্টা আগে সংসদে হামলা হল। তাঁরা কেউ-ই ভাবতে পারেননি এই অবস্থাতেও সমাবর্তনে যোগ দিতে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি এলেন, নিরাপত্তা ও অসুস্থতার কারণে পড়ুয়াদের হাতে সপ্তপর্ণী তুলে দেওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে ঠিক হল উপাচার্য, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধি হয়ে একটি সপ্তপর্ণী নেবেন আচার্যের হাত থেকে। এ কথা শুনে কিছু পড়ুয়া বিক্ষোভ শুরু করেন। পড়ুয়ারা কেন এ রকম করছে, তা জানতে চান অটলবিহারী। সুজিতবাবু তাঁকে বিষয়টি জানাতেই তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। অমায়িক ভাবে পড়ুয়াদের বলেছিলেন, ‘‘আমি তোমাদের আচার্য। দুর্ভাগ্যবশত আমি দেশের প্রধানমন্ত্রীও।’’ তাঁর এই একটা কথা শুনেই আম্রকুঞ্জ নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
একই ভাবে ২০০৪ সালে নোবেল চুরি যাওয়ার সময়েও দু’দিনের মধ্যেই বিশ্বভারতীতে এসেছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম যখন জানতে চেয়েছিল, নোবেল চুরিতে কার দোষ, সেই সময় বিশ্বভারতীর আচার্য হিসেবে উত্তর দিয়েছিলেন— ‘‘যে চুরি করেছে তার দোষ।’’ এক বারের জন্যও কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেননি। সেই সময়ে তাঁকে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন কৌশিক পাল। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরের দু’দিন আগে তিনি এই নির্দেশ পেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিশেষ ভাবে নির্দেশ ছিল বিভিন্ন মাছের পদ রান্না করার। পাবদা, চিংড়ি, তোপসে, ভেটকি মাছের পদ রান্না করা হয় তাঁর জন্য। সব কিছুই অল্প করে খেয়েছিলেন। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘ওঁর খুব পছন্দ হয়েছিল ঢেঁড়স পোস্ত এবং ভাঁপা সন্দেশ। নিজেই বলেছিলেন, রাঁধুনিদের সঙ্গে নিয়ে গ্রুপ ছবি তুলবেন।’’ সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল তাঁর রেস্তোরাঁয়।