বক্তা: নিজের অভিজ্ঞতা বলছে কিরণ বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র
বন্ধুদের থেকেও শেখার আছে অনেক কিছু। যেমন কিরণ। পুরুলিয়া ২ ব্লকের ধুরহি গ্রামের বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির কিরণ বাউড়ি। কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য। বুধবার পুরুলিয়ার সার্কিট হাউসে ইউনিসেফের প্রতিনিধিদের সে বলছিল বছর দুয়েক আগের অভিজ্ঞতা। কিরণের নিজের কথায়, ‘‘গ্রামে আমারই বয়সী মেয়েরা ন্যাপকিন ব্যবহার করত না। কাপড় ব্যবহার করত। আমি যখন ন্যাপকিনের কথা বলি, ওরা প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিল। নিজের পয়সা থেকেই তাদের জন্য স্কুল থেকে ন্যাপকিন কিনে নিয়ে যাই। এখন তারা প্রায় সবাই ন্যাপকিন ব্যবহার করে।’’
এ দিন কন্যাশ্রী কিশোরীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন ও ইউনিসেফ। সেখানে ইউনিসেফের স্টেট চিফ মহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘‘কিরণের মত মেয়েরাই আশার আলো।’’ তাদের দূত করে প্রত্যন্ত এলাকার কিশোরীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যের পাঠ দিতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উড়ান’। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় জানান, কিরণ যে স্কুলের ছাত্রী, পুরুলিয়া ২ ব্লকের সেই হরিমতি গার্লস হাইস্কুল থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ‘উড়ান’ শুরু হবে। কাজে সাহায্য করবে ইউনিসেফ। ধাপে ধাপে বিভিন্ন ব্লকেই প্রকল্পটি চালু হবে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে আমাদের ভাবনা অনেক দিনের। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মী বদলি হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সেই কাজের ধারাটা ধরে রাখতে চাইছি আমরা।’’
২০১৫ সালে ইউনিসেফের সহায়তায় স্কুল ছাত্রীদের নিয়ে জেলায় প্রথম কন্যাশ্রী ক্লাব গড়া হয়েছিল। এখন ২০টি ব্লক আর ৩টি পুর-এলাকায় তেমন ক্লাবের সংখ্যা ২৮৭টি। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘আমরা একটি সমীক্ষায় দেখেছি, প্রত্যন্ত এলাকার মাত্র ১৫ শতাংশ মহিলা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। ন্যাপকিন ব্যবহার না করায় অনেকে অসুস্থ হন। সারভাইক্যাল ক্যানসার পর্যন্ত হচ্ছে। তাই এই ভাবনা।’’ তিনি জানান, ইউনিসেফের সহায়তায় প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েদের কাছে অল্প দামে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়া হবে। অল্প দাম মানে, পাঁচ টাকায় দু’টি ন্যাপকিন মিলবে।
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়। পরে বিভিন্ন ব্লকে সেই যন্ত্রের সংখ্যাটা বেড়েছে। কিন্তু রিফিল করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে খবর। চাহিদা থাকলেও ঠিক মতো যোগান দেওয়া যাচ্ছিল না। জেলাশাসক জানান, এ বার ন্যাপকিন তৈরির ইউনিট গড়া হয়েছে। আপাতত দু’টি ইউনিট কাজ করছে। প্রতিদিন তিন হাজার করে ন্যাপকিন তৈরি হচ্ছে।
এ দিকে, জেলায় এখন দুশোরও বেশি কন্যাশ্রী ক্লাব কাজ করছে। আরও সাতশো ক্লাব গঠনের কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা প্রশাসনের কর্তাদের। জেলায় ৭৩২টি স্কুল রয়েছে। মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে রয়েছে আশি হাজার কন্যাশ্রী। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে কন্যাশ্রী ১৪,৭২৪ জন। কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যরাই বন্ধুদের হাতে ন্যাপকিন পৌঁছে দেবে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন, বন্ধুদের মাধ্যমেই কিশোরীদের নিয়মিত সচেতনতার পাঠ দেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে কোনও সঙ্কোচ ছাড়াই সহজ ভাবে তারা কথা বলে অনেক ভুল ধারণা ভাঙতে পারবে।