ভরসা: জল আটকাতে ত্রিপল, বালতি। ছবি: সুজিত মাহাতো
ছাদ থেকে জল পড়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অস্ত্রোপচার। তার জেরে গত কয়েক মাস ধরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ল্যাপারস্কোপি বা স্বল্পক্ষত চিকিৎসা কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার করাতে আসা রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর আশ্বাস, ‘‘কী করা যায় দেখছি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে জেলার স্বাস্থ্য দফতরের হাল হকিকত জেনে পরিষেবার মান উন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন। তাঁর চেষ্টাতেই ২০১৪ সালের জুলাইতে এই হাসপাতালে স্বল্পক্ষত চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। শুরু হয় পিত্তথলিতে পাথর, হার্নিয়া ও অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচার করা। বায়োপসির নমুনা সংগ্রহ, পেটব্যথার কারণ নির্ণয়ের মতো কিছু পরিষেবাও দেওয়া হচ্ছিল রোগীদের। বিভাগটি খোলার পরে প্রথম দিকে সপ্তাহে দু’দিন করে ল্যাপারস্কোপি করা হতো। পরবর্তীকালে সপ্তাহে এক দিন করে অস্ত্রোপচার হচ্ছিল। সরকারি হাসপাতালে এত উন্নতমানের অস্ত্রোপচারের কারণে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের যথেষ্ট সুনাম ছড়ায়। দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে এখানে অস্ত্রোপচার করাতে আসতেন।
কিন্তু, ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ার সমস্যা ধরা পড়ার পর থেকেই বিপত্তির শুরু। হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই বিভাগ চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই যন্ত্রাংশ ভেঙে মাস দেড়েক বন্ধ থাকে পরিষেবা। তবে অস্ত্রোপচারের ঘরের ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ার ঘটনা প্রথম ধরা পড়ে ২০১৫ সালের অক্টোবরে। তখনও টানা কয়েক মাস বন্ধ রাখা হয়। পরে চালু হয়। কিন্তু, তা স্থায়ী হল না। গত পুজোর পর থেকেই ফের ছাদ থেকে জল পড়তে শুরু করেছে বলে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন।
কী কারণে জল পড়ছে, তা ধরা যাচ্ছে না বলেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন। ছাদের সেই রোগ ধরা না পড়াতেই বিপত্তি চলছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ার সমস্যা আর শুধু ল্যাপারস্কোপি বিভাগে বা অপারেশন থিয়েটারেই আটকে নেই। কিছু দিন ধরে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে এই ওটি সংলগ্ন পাশের ঘরেও। অপারেশন থিয়েটারের অবজারভেশন রুম থেকে ওটির বারান্দাতেও জল পড়ছে একই ভাবে। ছাদ চুঁইয়ে পড়া জল আটকাতে ওটির বারান্দায় টাঙানো রয়েছে প্লাস্টিক।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁরা বিষয়টি পূর্ত দফতরকে জানিয়েছেন। কিন্তু, সমস্যা যে কোথায়, তা ধরতে পারছে না পূর্ত দফতর। কিছু দিন ঠিক থাকছে, তারপরে সেই একই সমস্যা। হাসপাতালের সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘আমরা পূর্ত দফতরকে ছাদ থেকে জল পড়ার সমস্যার কথা জানিয়েছি। তাঁরা বিষয়টি দেখছেন। ছাদ মেরামত করে আমাদের হাতে দিলে, ফের পরিষবা চালু করা হবে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জানি। দেখা যাক, পূর্ত দফতর কবে ওই ওয়ার্ডটি দেয়।’’
হাসপাতালের প্রথম তলায় যেখানে এই ওটি রয়েছে, তার ঠিক উপরের তলাতেই শৌচালয় রয়েছে। হাসপাতালের কর্মীরা মনে করছেন, শৌচালয়ের জল ছাদ চুঁইয়ে নীচে পড়ছে। পূর্ত দফতরের নির্মাণ বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কাজ চলছে। যেখানে সমস্যা ছিল, মনে হয় খুঁজে বার করা গিয়েছে। কাজও প্রায় শেষ। এখন জল পড়া বন্ধ হয়েছে। আমরা তাড়াতাড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করব।’’
কবে সমস্যার সমাধান হয়, সে দিকেই তাকিয়ে পুরুলিয়ার কাটিনপাড়ার বাসিন্দা মুক্তার আনসারি। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তিন-চার মাস ধরে ঘুরছি। কিন্তু, কবে অস্ত্রোপচার হবে জানি না।’’ পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা মহম্মদ আসলামও জানান, তাঁর এক আত্মীয়ের পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়েছে। সাত মাস ধরে ঘুরেও অস্ত্রোপচারের তারিখ তাঁরা পাচ্ছেন না। সবারই দাবি, এ বার দ্রুত ল্যাপারস্কোপি অস্ত্রোপচার চালু করা হোক।