দিনভর স্তব্ধ বলরামপুর

প্রতিবাদের বন্‌ধে সাড়া স্বতঃস্ফূর্ত

জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। অভিযোগে নাম থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বলরামপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০১:৫১
Share:

কলেজ পড়ুয়া দলীয় কর্মীকে খুনের প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছিল বিজেপি। সুনসান বলরামপুর বাসস্ট্যান্ড। ছবি: সুজিত মাহাতো

আবার বন্‌ধ। সেই সুনসান রাস্তাঘাট। সার দেওয়া বন্ধ দোকান।

Advertisement

সুপুরডি গ্রামের বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর খুনের প্রতিবাদে বিজেপির ডাকা বৃহস্পতিবারের ১২ ঘণ্টার বলরামপুর বন্‌ধে ভাল সাড়া পড়ল। যা দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যায়, মাওবাদী জমানার কথা। তখনও মাওবাদীদের ডাকে বলরামপুর এমনই থমকে থাকত দিনের পর দিন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কলেজ পড়ুয়া একটা নিরীহ ছেলেকে নির্মম ভাবে খুনের প্রতিবাদে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ এ দিন বন্‌ধে সাড়া দিয়েছেন। এমনকী শাসকদলকেও বন্‌ধের বিরোধিতা করতে পথে নামতে দেখা যায়নি। সবাই দোষীদের কড়া শাস্তি চায়। যদিও ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও খুনের ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় বিজেপি নেতৃত্বের সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। অভিযোগে নাম থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেষবার বলরামপুর বন্‌ধ দেখেছিল। এত দিন পরে এ দিনও সেই চেনা ছবিই ফিরে আসে। সকাল থেকে বলরামপুরের সমস্ত দোকানপাটই ছিল বন্ধ। অন্যদিন সকালের দিকে যে বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ও যাত্রীদের ভিড় থাকে, এ দিন সেখানেই উড়ে বেড়িয়েছে এক ঝাঁক পায়রা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবশ্য থমথমে মুখে জটলা চোখে পড়েছে। তবে পুলিশ ও সিভিক কর্মীরা টহল দিয়েছেন। এরই মধ্যে শুধুমাত্র লোকজনের ভিড় দেখা গিয়েছে সরাই ময়দান লাগোয়া বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে একটা প্রশ্নই এ দিন দিনভর ঘুরেছে— ‘‘তরতাজা ছেলেটাকে খুন করে কার কী লাভ হল?’’

ত্রিলোচনের গ্রাম সুপুরডি গ্রামের যাওয়ার রাস্তাতেও লোকজনের চলাচল বিশেষ ছিল না। বিজেপির যুব মোর্চার বলরামপুর ব্লক সভাপতি ছুটুলাল মাহাতোর বাড়ি সুপুরডি গ্রামেই। তাঁর দাবি, ‘‘ভোটের আগেই গোলমালের মামলায় এলাকায় আমাদের তিন নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন আমাদের যুবমোর্চার কর্মীরাই ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ত্রিলোচন ছিলেন আমাদের এই গ্রামের বুথ সুরক্ষা বাহিনীর সচিব। আমরা কেউ ময়দান ছেড়ে দিইনি। এই সক্রিয়তাই তৃণমূলের লোকেরা ভাল ভাবে নেয়নি। ওরা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। সেটাই করল ওরা।’’

যদিও তা মানতে নারাজ তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি সুদীপ মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘২০১১ সালের পর থেকে বলরামপুরে কোনও বন্‌ধ হয়নি। বিজেপি পঞ্চায়েত সমিতিতে আসার পরেই সেই দিন ফিরে আসছে। আমি জোর গলায় বলছি, এর সঙ্গে তৃণমূল কোনও ভাবেই জড়িত নয়। আমরাও চাই সত্য উদ্ঘাটন হোক। যে কোনও এজেন্সি তদন্ত করুক আমাদের আপত্তি নেই।’’

তৃণমূলের জেলা সম্পাদক গৌতম রায়ের আবার দাবি, ‘‘ঝুলন্ত দেহের পাশে এমন ভাবে কাগজে লিখে রাখা হয়েছে, যাতে তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলা যায়। বিভ্রান্তি ছড়াতেই সুকৌশলে এই কাজ করা হয়েছে। প্রকৃত তদন্ত হলেই সত্য বেরিয়ে আসবে।’’ বলরামপুরের তৃণমূল নেতা সৃষ্টিধর মাহাতোও দাবি করেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।

তবে এই খুনের পিছনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। দলের ওবিসি মোর্চার সহ-সভাপতি বাঁটুলাল মাহাতো বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে ত্রিলোচন বাঁচানোর আর্তি জানিয়ে ফোন করার পর থেকেই পুলিশ তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন চিহ্নিত করে গ্রামবাসীদের নিয়ে তল্লাশি চালায় বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু, কোথাও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন সকালে যেখানে দেহ পাওয়া গেল, সেই জায়গার হদিস অবশ্য মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনে দেখায়নি। আমাদের ধারণা, বিভ্রান্ত করতেই আততায়ীরা ত্রিলোচনকে এক জায়গায় রেখে মোবাইল ফোনটা নিয়ে অন্যান্য জায়গায় ঘুরেছে।’’ পুলিশ দেহের কাছেই ফোনটি পায়। সেই ফোন ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে।

বুধবার ছেলের দেহ উদ্ধারের পর বলরামপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ত্রিলোচনের বাবা হাড়িরাম মাহাতো। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, ভোটের দিন ত্রিলোচন বিজেপির হয়ে কাজ করেছিল বলে কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। তখনই ওঁরা তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। অভিযোগ পত্রে সেই ছ’জনের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন। অভিযুক্তেরা হলেন, নবকিশোর মাহাতো, ফটিকচন্দ্র মাহাতো, ভক্তরঞ্জন মাহাতো, জগবন্ধু মাহাতো, কান্তিরাম মাহাতো ও মিহির মাহাতো। যুবমোর্চার ব্লক সভাপতি ছুটুলালের দাবি, ‘‘তাঁরা সবাই তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরাসরি এই হত্যায় কারও নামে অভিযোগ হয়নি। আগের একটি ঝামেলার ঘটনা উল্লেখ করে ছ’জনের নামে অভিযোগে রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন