মন্ত্রীর স্কুলে বালা বিলি, বিধিভঙ্গের কোপে স্কুল

নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করে কন্যাশ্রী প্রকল্পের মমতাবালা বিলি করল খোদ শিক্ষা প্রতি মন্ত্রীর স্কুল। খবর পেয়ে রামপুরহাট মহকুমাশাসক অবশ্য রামপুরহাট গার্লস স্কুলে বালা বিলি করা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিরোধীরা এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ না করলেও, তারা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১০
Share:

নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করে কন্যাশ্রী প্রকল্পের মমতাবালা বিলি করল খোদ শিক্ষা প্রতি মন্ত্রীর স্কুল। খবর পেয়ে রামপুরহাট মহকুমাশাসক অবশ্য রামপুরহাট গার্লস স্কুলে বালা বিলি করা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিরোধীরা এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ না করলেও, তারা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। এ দিনই বিকালে রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে ডেকে পাঠিয়ে বালা বিলি করা বন্ধ হয়েছে। এটা নির্বাচন বিধি ভঙ্গের আওতায় পড়ে। সেই জন্য নির্বাচনের পরে বিলি করার জন্য তাঁকে বলা হয়েছে।’’

Advertisement

ঘটনা হল এই বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত সরকার এবার তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে রামপুরহাট পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী। আবার স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এই স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালন কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন। এমন একটি স্কুলে নির্বাচনের সময় কন্যাশ্রী প্রকল্পের ‘মমতাবালা’ বিলি করা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

বিজেপির জেলা-সহ সভাপতি তথা এবারের পুর নির্বাচনে রামপুরহাট পুরসভার ৫ নম্বর বিজেপি প্রার্থী শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘একজন মন্ত্রী যে স্কুলের সম্পাদক সেই স্কুলে এই ভাবে অনিয়ম করে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করে কন্যাশ্রী প্রকল্পের বালা বিলি করা হল। দলের পক্ষ থেকে আমি মনে করি এটা নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূল এই ভাবে নির্বাচনের সময় ভোটারদের প্রলোভিত করছে। আমরা এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় ভাবে অভিযোগ দায়ের করব।’’ একই দাবি, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মণের। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল সারা রাজ্যে নানান ভাবে ছলে বলে কৌশলে ভোটারদের প্রভাবিত করছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করব।’’

Advertisement

স্কুল সূত্রে খবর, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিসের সহকারী স্কুল পরিদর্শক স্কুলকে জানিয়েছিল মহকুমার সমস্ত স্কুলে কন্যাশ্রী প্রকল্পের বালা রামপুরহাট মহকুমাশাসকের দফতরে এসে পড়ে আছে। সেই খবর পেয়ে স্কুলের জন্য ৮৭৪ টি বালা গত ১৭ মার্চ স্কুলে আনা হয়।

এতদিন ধরে কেন বালাগুলি বিলি করা হয়নি?

রামপুরহাট গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছায়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকার জন্য বিলি করা যায়নি। অন্যান্য স্কুলের মেয়েরা পেয়ে গিয়েছে দেখে, ছাত্রীরা আমাদের কাছে দাবি জানিয়েছিল। সেই জন্য ৮ এপ্রিল স্কুলে নোটিশ দিয়ে আজ থেকে বালা বিলি করার জন্য জানান হয়েছিল। সেই মতো আজকে ১০ ৮ ছাত্রীকে বালা বিলি করা হয়েছে।’’

এ দিন প্রধান শিক্ষিকা স্বীকার করেন, নির্বাচন বিধির মধ্যে বালা বিলি পড়তে পারে তা তাঁর জানা ছিল না। এদিকে বিরোধীদের অভিযোগ, স্কুলের সম্পাদক এবং সভাপতি পরিকল্পিত ভাবে নির্বাচনের সময় এই বালা করিয়েছেন। সে প্রসঙ্গে অবশ্য প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে স্কুল পরিচালন কমিটি কোনওভাবে প্রভাবিত করেনি।’’

কী বলছেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়?

আশিসবাবু বলেন, ‘‘আমি তো মনে করি বালা বিলি করে কোনও রকম নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করা হয়নি। কন্যাশ্রী প্রকল্প একটা চালু প্রকল্প, তাই এটা বিধি ভঙ্গের মধ্যে পড়ে না।’’ জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘ঠিক কি ঘটেছে সে ব্যপারে মহকুমাশাসককে খোঁজ খবর নিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন