বাক্স বোঝাই করাই সার, কয়েন নিল না ব্যাঙ্ক

কয়েন নেবেন, কয়েন! এই আর্জি নিয়ে ব্যাঙ্কে ভিড় করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কেউ বাক্স বোঝাই করে, কেউ আবার পুটুলি বেঁধে পকেটে পুরে দশ টাকার কয়েন জমা করতে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৮
Share:

দশের কয়েন নিয়ে সমস্যা। —নিজস্ব চিত্র।

কয়েন নেবেন, কয়েন! এই আর্জি নিয়ে ব্যাঙ্কে ভিড় করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কেউ বাক্স বোঝাই করে, কেউ আবার পুটুলি বেঁধে পকেটে পুরে দশ টাকার কয়েন জমা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, জমা নেওয়া হবে না বলে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছেন বাঁকুড়ার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

দশ টাকার কয়েন যাতে ব্যাঙ্ক জমা নেয়, সেই দাবি সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছে বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। সোমবার দুপুরে শহরের কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দশ টাকার কয়েন জমা করতে গিয়ে ছিলেন ওই বণিকসভার সদস্যেরা। তবে বেশির ভাগ ব্যাঙ্কই কয়েন জমা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয় বলে দাবি তাঁদের। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার অভিযোগ, বাঁকুড়া শহরের লালবাজার, নতুনগঞ্জ, নতুনচটি ও তামলিবাঁধ মোড় সংলগ্ন এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক দশ টাকার কয়েন নিতে অস্বীকার করে। তিনি বলেন, “ব্যাঙ্কের কর্তারা মুখের উপর বলে দিয়েছেন, কয়েন জমা নেওয়া হবে না। এটা অনৈতিক কাজ। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

বস্তুত, দশ টাকার কয়েন নিয়ে জেলার বাজারে বিভ্রান্তি চলছে কয়েক মাস ধরেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ১০ টাকার কয়েন পুরোপুরি বৈধ। বেচাকেনার সময় তা নিতে কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ওই ঘোষণার পরে জেলার বাজারে বেশ কিছু ব্যবসায়ী দশ টাকার কয়েন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া শুরু করেন। এই কয়েন নিয়ে বিভ্রান্তি মেটাতে বণিকসভাও প্রচারে নামে। তাতেও অবশ্য সমস্যা মেটেনি। জেলার বাজারগুলিতে এখনও ক্রেতা বা বিক্রেতাদের একটা বড় অংশই দশ টাকার কয়েন নিতে অস্বীকার করছেন।

Advertisement

এই ঘটনায় বহু ব্যবসায়ীর কাছেই দশ টাকার কয়েনের পাহাড় জমে গিয়েছে। বাজারে চালাতে না পেরে কোনও মতে ব্যাঙ্কে ওই কয়েন জমা দিয়ে সমস্যা মেটাতে চাইছেন তাঁরা। তবে অনেক ব্যাঙ্কই ওই কয়েন জমা নিতে চাইছে না বলে অভিযোগ উঠছে। দশ টাকার কয়েন না নিলে গ্রাহকদের ক্ষোভ, অন্য দিকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের ওই কয়েন জমা নিতে না চাওয়া— এই দুয়ের টানাপড়েনে আপাতত পাম্প বন্ধ করে দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের রবীন্দ্র স্ট্যাচু মোড় এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক গুরুদাস মহন্ত। কাজ হারান ওই পাম্পের কর্মীরা।

এই ঘটনার পরেও ব্যাঙ্কগুলির মনোভাবে বদল আসছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী মহলের। জেলার অন্যতম বড় ব্যবসায়ী, বাঁকুড়ার শহরের বিষ্ণু বাজোরিয়ার চারটি পেট্রোল পাম্প রয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। বিষ্ণুবাবু জানান, তাঁর কাছে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের দশ টাকার কয়েন জমা হয়ে রয়েছে। ক্রেতারা নিচ্ছেন না। ব্যাঙ্কও জমা নিচ্ছে না। এ দিন তাঁর দফতরের কর্মীদের দিয়ে কয়েনগুলি বড় বাক্সে ভরে লালবাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় জমা করতে পাঠিয়েছিলেন বিষ্ণুবাবু। তাঁর অভিযোগ, “ব্যাঙ্ক ওই টাকা জমা না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই প্রথমবার নয়। আগে বহুবার ব্যাঙ্কে কয়েন জমা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। লাভ হয়নি।’’

বাজারে চলছে না, ব্যাঙ্কও জমা নিচ্ছে না। ‘‘এই পরিস্থিতিতে এত কয়েন নিয়ে আমি কী করব?’’— প্রশ্ন তুলেছেন ওই ব্যবসায়ী। সমস্যা মেটাতে অবিলম্বে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়েছেন।

দশ টাকার কয়েন বাজারে সচল করতে পুলিশ ও প্রশাসন কি সচেষ্ট হবে? এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি জেলা পুলিশের কাছ থেকে। তবে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাকের ম্যানেজার বলেন, “বাজারে গিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ আমাদের নয়। ব্যাঙ্ক ভরে যাচ্ছে দশ টাকার কয়েনে। অবিলম্বে বিভ্রান্তি কাটাতে এবং ওই কয়েন বাজারে সচল করতে প্রশাসন ও পুলিশের সচেষ্ট হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন