শহর হয়েছে দূর, অবরোধে ভোগান্তি বাঁকুড়ায়

গ্রাম থেকে শহরে আসতে কয়েকশো মিটারের রাস্তা পার হলেই হত। কিন্তু, উড়ালপুল চালু হয়ে রেলগেট পাকাপাকি বন্ধ হয়ে পড়ায় সেই শহরই এখন প্রায় তিন কিলোমিটার দূর হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় সমস্যায় পড়ছেন বাঁকুড়ার ভাদুল সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। সমস্যা মেটাতে রেলগেট খুলে দেওয়ার দাবিতে আগেও উড়ালপুল অবরোধে নেমেছিলেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

বন্ধ পথ খুলে দেওয়ার দাবি। বাঁকুড়ার ভাদুলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

গ্রাম থেকে শহরে আসতে কয়েকশো মিটারের রাস্তা পার হলেই হত। কিন্তু, উড়ালপুল চালু হয়ে রেলগেট পাকাপাকি বন্ধ হয়ে পড়ায় সেই শহরই এখন প্রায় তিন কিলোমিটার দূর হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় সমস্যায় পড়ছেন বাঁকুড়ার ভাদুল সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। সমস্যা মেটাতে রেলগেট খুলে দেওয়ার দাবিতে আগেও উড়ালপুল অবরোধে নেমেছিলেন তাঁরা। প্রশাসনের কাছ থেকে খতিয়ে দেখার আশ্বাস অবরোধ তুলেও নিয়েছিলেন। কিন্তু, দাবি আদায় না হওয়ায় ফের পথ অবরোধে নামলেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘণ্টাখানেক বাঁকুড়া শহরের প্রবেশ পথ কেরানিবাঁধ মোড়ে উড়ালপুলের সামনে পথ অবরোধ করেন কয়েকশো গ্রামবাসী। এ দিনও ওই গ্রামবাসীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তুলেছে প্রশাসন। তার আগে অবশ্য যানজটে ফেঁসে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার কয়েক দিন আগেই ওই উড়ালপুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। আর সেই দিন থেকেই বাঁকুড়া-মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া-সোনামুখী শাখার রেলগেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। ঘটনা হল, ওই দু’টি রেলগেটের মাঝামাঝিই রয়েছে ভাদুল-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এখানকার বাসিন্দাদের বেশির ভাগকেই নানা কাজে বাঁকুড়া শহরে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। এলাকার বেশিরভাগ মহিলা ও পুরুষই শহরের বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুরি করে সংসার চালান। কেউ হেঁটে, কেউ সাইকেলে শহরে আসেন। রেলগেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘুর পথে শহরে ঢুকতে অনেকটাই বেশি সময় লাগছে তাঁদের। গ্রামের বহু ছেলেমেয়েও শহরের স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমনকী, ঘুরপথে যে রাস্তাটি রয়েছে সেটিও বেশ সরু রাস্তা। রেলগেট বন্ধ হয়ে গিয়ে ওই পথে যানচলাচল বাড়ায় হামেশাই যানজট হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

এ দিন অবরোধে সামিল ভাদুলের বাসিন্দা রাহুল মল্ল, প্রদীপ কর্মকার, প্রেমানন্দ গরাইদের ক্ষোভ, “শহর ছাড়া আমাদের গতি নেই। কিন্তু, রেলগেট বন্ধ হয়ে পড়ায় আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছি। পাঁচ মিনিটের রাস্তা এখন যেতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।’’ শুধু যে ওই গ্রামের বাসিন্দারাই সমস্যায় পড়ছেন তা নয়। শহরের মানুষের একাংশও সমস্যায় পড়ছেন। কেরানিবাঁধের বাসিন্দা রাজীব খান্ডেলওয়াল বলেন, “প্রায়ই নানা কাজে আমাদের ভাদুলে যেতে হয়। রেলগেট বন্ধ হয়ে আমাদেরও বিপাকে ফেলে দিয়েছে।’’ এ দিন রেলগেট চালু করার দাবিতে গ্রামবাসীরা হাতে পোস্টার নিয়ে অবরোধে নেমেছিলেন। অনেক মহিলাও সামিল হয়েছেন। ক্ষোভ এতটাই ছিল যে অনেকেই আইন হাতে তুলে নিয়ে রেলগেট জোর করে খুলে দিতে চাইছিলেন। যদিও গ্রামবাসীদের একাংশের কথাতেই শেষ অবধি নিরস্ত হন তাঁরা।

এ দিনের অবরোধের জেরে বহু যাত্রিবাহী বাস, লরি ও ছোট গাড়ি আটকে পড়ে। নাজেহাল হন যাত্রীরা। ভোটের বাজারে এই ঘটনায় প্রশাসনও অস্বস্তিতে পড়ে। অবরোধ ওঠার পরে উড়ালপুলে দীর্ঘ যানজটও দেখা গিয়েছে। যানজটে নাকাল বহু মানুষকেই এই ঘটনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে দুষতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের মন্তব্য, “সব দিক খতিয়ে দেখেই রেলগেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। প্রশাসনেরও উচিত ছিল, রেলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যা মেটানো।’’

গ্রামবাসীদের দাবিটিকে অবশ্য মান্যতা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। রেলের কাছে চিঠি দিয়ে গেট খুলে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। জেলাশাসকের নির্দেশে বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা নিজে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা আদ্রার ডিআরএমের কাছে চিঠি দিয়ে বাঁকুড়া–সোনামুখী শাখার রেলগেটটি খুলে দিতে বলেছি। ডিআরএম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও আমাদের কাছে খবর আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন