কুসংস্কারে ভুলবে না আর টুসু

খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) অরবিন্দ হালদার। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘সাপে কাটলে কী করা উচিত, সে জন্য সচেতন করতে আমাদের আশা কর্মীরা গ্রামে গ্রামে কাজ করেন ঠিকই।

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

রাধানগর সায়েরপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

টুসু গানে এ বার কুসংস্কার ভাঙার ডাক দিয়েছে বিষ্ণুপুরের রাধানগরের কিছু স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী। তারা গাইছে— ‘‘আমার টুসু স্কুলে যাবে/ সবার সাথে দলবেঁধে/ শিখবে টুসু জ্ঞান-বিজ্ঞান/ ভুলবে না আর কবজে...।’’

Advertisement

পৌষ মাস জুড়ে রাঢ় বাংলার গ্রামে গ্রামে মেয়ে-বৌয়েরা সন্ধ্যায় টুসু গান। সন্ধ্যা নামলেই এ পাড়া, ও পাড়া থেকে ভেসা আসে নানা সুরে, নানা কথায় বাঁধা টুসু গান। দিনবদল হলেও টুসু গানের জৌলুস কমেনি। বরং তা এ বার অন্য আঙ্গিক পেয়েছে সমাজ সচেতনতার বার্তা বহন করে।

লালমাটির দেশে সর্পাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা কম নয়। এ নিয়ে কুসংস্কার এখনও রয়েছে। সাপে কাটলে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে রোগীকে নিয়ে ওঝার কাছে ছোটেন অনেকে। তাই রাধানগরের বিজ্ঞান কর্মী সৌম্য সেনগুপ্ত এলাকার মেয়েদের চিরাচরিত টুসু গানের বদলে এ বার অন্য ধরনের গান গাইতে প্রস্তাব দেন। তিনি নিজেই গানগুলি বেঁধেছেন। সেই গানই এক মাস ধরে গাইছে মেয়েরা।

Advertisement

রাধানগরের সায়ের পাড়ার অসীমা বাগদি, সোনালি বাগদিরা গেয়ে ওঠে— ‘‘সাপে কাটলে ভয় না পেয়ে/ যাবে টুসু হাসপাতালে/ ওঝার থানে ফেলে রাখলে/ বিপদ আমার কাটবে না...।’ রিম্পা বাগদি, মৌসুমি বাগদি গান গাইবার ফাঁকে বলে, ‘‘সাপে কাটার পরে প্রতিটি মিনিট মূল্যবান। ওঝা বা গুনিনের কাছে না গিয়ে তাই রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া জরুরি। সেই বার্তা দিতে চেয়েছি আমরা টুসু গানে।’’ তারা যখন এই গান গাইছিল, বাড়ির লোক বটেই, পড়শিরাও ভিড় করেন। অনেকে বাহবাও দেন। আর সৌম্য বলছেন, ‘‘ঘরের মেয়েরা যখন এই গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলো বলে, তখন তা সবার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। তাতে সচেতনতার কাজ বেশি কার্যকরী হয়। এর থেকে সচেতনতা শেখার ভাল পদ্ধতি আর হতে পারে না।’’

খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) অরবিন্দ হালদার। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘সাপে কাটলে কী করা উচিত, সে জন্য সচেতন করতে আমাদের আশা কর্মীরা গ্রামে গ্রামে কাজ করেন ঠিকই। তবুও গ্রামের মেয়েরা লোকসংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে এই ধরনের সচেতনতার বার্তা দিলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। ওই মেয়েদের টুসুগান প্রশংসনীয়। ওরা দৃষ্টান্ত তৈরি করল।’’

গত কয়েক বছর ধরে বিষ্ণুপুরে টুসু গানের প্রতিযোগিতা হয়ে আসছিল। কিন্তু এখন বন্ধ। তবুও নতুন ধরনের টুসু গান বাঁধা বন্ধ করেননি একসময়কার অনেক প্রতিযোগীই। তাই বিষ্ণপুরে খড়বাংলা পাড়ার আনাজ বিক্রেতা গায়ত্রী মণ্ডল, নির্মাণ শ্রমিক অমৃতা কদমা, রবি মিদ্যারা জেলা জুড়ে চলা পথ নিরপত্তা সপ্তাহকে মাথায় রেখে গান বেঁধেছেন— ‘‘তুসু মাকে প্রণাম করি/ পথ নিরপত্তা পালন করি/ সবাই মিলে পণ করি গো/ হেলমেট ছাড়া গাড়ি চড়ব না গো।’’ সবুজসাথী, কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়েও তাঁদের টুসু ছড়াচ্ছে কনকনে বাতাসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন