ফুটপাথে কম্বল বিলি বিডিও-র

বছরের শেষ রাতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া মহম্মদবাজারের শেওড়াকুড়ি মোড়, মহম্মদবাজার, প্যাটেলনগর বা আঙ্গারগড়িয়া মোড়ে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটানো জনাপঁয়ত্রিশ নিরাশ্রয় মানুষের এমনই অভিজ্ঞতা হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাঝরাতে অচেনা গলার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙতেই অবাক তাঁরা। চোখ কচলে ওঁরা দেখলেন, সামনে কম্বল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিডিও, অতিরিক্ত জেলাশাসক! ফুটপাথবাসী ওই লোকেদের হাতে কম্বল তুলে দিয়ে সরকারি আধিকারিকেরা বললেন— ‘‘এটা গায়ে জড়িয়ে নিন। ঠাণ্ডায় একটু আরাম পাবেন।’’

Advertisement

বছরের শেষ রাতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া মহম্মদবাজারের শেওড়াকুড়ি মোড়, মহম্মদবাজার, প্যাটেলনগর বা আঙ্গারগড়িয়া মোড়ে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটানো জনাপঁয়ত্রিশ নিরাশ্রয় মানুষের এমনই অভিজ্ঞতা হল। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে, আপ্লুত মানুষগুলি বলেন, ‘‘এমনও হতে পারে।’’

হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় শতছিন্ন চাদর, কাঁথা মুড়ি দিয়ে বন্ধ দোকান, ঘরের দাওয়া, যাত্রী প্রতীক্ষালয় বা মন্দির-মসজিদের সামনে বাঁধানো চাতালে কোনওমতে রাত কাটাতেন তাঁরা। এমন কিছু অসহায় মানুষের কাছে ‘উষ্ণতার আঁচ’ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন মহম্মদবাজারের বিডিও আশিস মণ্ডল।

Advertisement

তাঁর কথায়, ‘‘এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের সরকারি ভাবে বা ত্রাণ তহবিল থেকে সাহায্য করা সম্ভব নয়। শীতে কুঁকড়ে থাকা সে সব লোকেদের জন্য সামান্য কিছু করার ভাবনা ছিল। শুধু আমি নই, সামিল ছিলেন ব্লকের অন্য কর্মীরাও। সকলে চাঁদা তুলে কম্বল কেনা হয়।’’

জেলা প্রশাসনকে জানানোর পর বিডিও-র পাশে দাঁড়ান অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) দীপ্তেন্দু বেরা। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনটি গাড়িতে ঘুরে ঘুরে নিরাশ্রয়দের খুঁজে তাঁদের হাতে কম্বল তুলে দেন বিডিও, এডিএম। ঘুমন্ত অবস্থায় কারও কারও গায়ে সযত্নে জড়িয়ে দেন কম্বল।

অন্য আর পাঁচটা দিন যাঁরা বাধ্য হয়ে গোটা রাত জাতীয় সড়কে ধরে ছুটে চলা ভারী গাড়ির বুক কাঁপানো আওয়াজ এবং হাড়কাঁপানো ঠান্ডা সহ্য করেন, তাঁদের জন্য সরকারি আধিকারিকদের এই আন্তরিকতায় শহরবাসী মুগ্ধ।

শেওড়াকুড়ির পথবাসী প্রৌঢ়া বুলবুলি দে, বৃদ্ধ কার্তিক মণ্ডল, প্যাটেলনগরের চিনি মাড্ডি, আঙ্গারগড়িয়ার শঙ্করী বাগদী বলছেন— ‘‘শীতে প্রচণ্ড কষ্ট তো হয়। কিন্তু যাঁদের ঘরদুয়ার, তিনকূলে কেউ না থাকে তাঁরা কী করবে। আমাদের মতো অসহায় মানুষের কথা যে ওঁরা ভেবেছেন, তাতেই আমরা সবাই
খুব খুশি হয়েছি।’’

শুধু মহম্মদবাজার নয়, বছর শেষের রাতে সিউড়ি শহরে একই রকম উদ্যোগ নিয়েছিলেন জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমার। অধস্থন পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সিউড়ি হাসপাতাল থেকে বাসস্ট্যান্ড— রাত আড়াইটে থেকে চারটে পর্যন্ত খোলা আকাশের নীচে রাতকাটানো শ’দেড়েক মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেন তিনিও। সিউড়ি হাসপাতালে অবশ্য অধিকাংশই রোগীর পরিজন। যাঁরা রোগী ভর্তি করে বাইরে শীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন। ঘুম ভাঙিয়ে জেলা পুলিশের শীর্ষকর্তার এমন উষ্ণ অভ্যর্থনায় মন ছুঁয়ে যায় তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন