অভিযান: পুরুলিয়ার সুভাষ পার্কে একটি গাছে মৌমাছিরা অনেকগুলি চাক বেঁধেছিল। ভাঙতে ওন্দা থেকে এলেন মৌপালক। ছবি: সুজিত মাহাতো
রবীন্দ্রজয়ন্তী পণ্ড করা মৌমাছিদের তাড়ানো হল। তবে যাওয়ার আগে ওই লেলহে মাছিগুলি জখম করে দিয়ে গেল খোদ ডিএফও-কে।
রবিবার পুরুলিয়া শহরের সুভাষ উদ্যানে মোট উনিশটি মৌচাক ভেঙেছে বন দফতর। এই কাজের জন্য বাঁকুড়ার ওন্দা থেকে অভিজ্ঞ মৌ-পালকদের নিয়ে আসা হয়েছিল। এ দিন সকাল থেকে চাক ভাঙার তোড়জোড় শুরু করেন তাঁরা। জালের টুপিতে মুখ ঢেকে, খড়ের মশাল নিয়ে, মই বেয়ে গাছে উঠে পড়েন তাঁরা। ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তা়ড়ানো শুরু হয়।
সেই সময়েই নীচে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিএফও (পুরুলিয়া বন সম্প্রসারণ বিভাগ) পুলক দত্ত ও কয়েক জন বনকর্মী। এক ঝাঁক মৌমাছি তেড়ে যায় তাঁদের দিকে। পুলকবাবু জানান, তাঁর চোখের উপরে এবং ঘাড়ে মৌমাছি হুল ফুটিয়েছে। হুলবিদ্ধ হয়েছেন কয়েক জন বনকর্মীও। মৌ-পালকেরাই তাঁদের শরীর থেকে হুল বের করে দেন। অভিজ্ঞতা থেকে ব্যথা কমার জন্য কিছু টোটকা চিকিৎসাও করে নেন ডিএফও ও বনকর্মীরা। আপাতত তাঁরা সুস্থ আছেন বলে ডিএফও জানিয়েছেন।
গত ৯জুন পুরুলিয়া শহরের সুভাষ উদ্যানে পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠান পণ্ড করেছিল ওই মৌমাছিগুলি। কলাকুশলী এবং দর্শক মিলিয়ে প্রায় পনেরো জন জখম হয়েছিলেন। চার জনকে ভর্তি করতে হয়েছিল হাসপাতালে। ওই অনুষ্ঠান দেখতে উপস্থিত ছিলেন ডিএফও পুলকবাবুও। তবে সে যাত্রা তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। ওই ঘটনার পরেই টনক নড়ে বন সম্প্রসারণ বিভাগের। সুভাষ পার্ক-সহ এলাকার বড় মৌচাকগুলি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পুরুলিয়ায় সেই কাজের জন্য দক্ষ লোকের সন্ধান পাওয়া দুস্কর হওয়ায় ভিন জেলা থেকে লোক আনাতে হয়। এ দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর পৌনে ২টো পর্যন্ত টানা কাজ করে মোট উনিশটা চাক ভাঙেন তাঁরা।
সুভাষ পার্কে চাক ভাঙার আগেই বনকর্মীরা জানতেন, তাড়া খেয়ে মৌমাছিগুলি বিক্ষিপ্ত ভাবে উড়তে থাকবে। পথচলতি মানুষজনকেও আক্রমণ করতে পারে। সেই আশঙ্কায় এ দিন সকাল থেকে পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাগোয়া সাউথ লেক রোডের একাংশও ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অত্যুৎসাহী লোকজন যাতে এলাকায় ঢুকে না পড়েন, সে জন্য কয়েক জন পুলিশকর্মীকে সেখানে মোতায়েন করে রাখা হয়। পার্কের ভিতরে চাক ভাঙার কাজ তদারক করছিলেন পুলকবাবু। সেই সময়েই জখম হন তিনি। পুলকবাবু বলেন, ‘‘জখম হয়েছিল বটে। এখনও বেশ ব্যথা আছে। তবে পুরো কাজটাই সুষ্ঠু ভাবে মিটেছে।’’