পরিষেবা বন্ধ না রেখেই প্রতিবাদ জেলায়

এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোমবার রাতে জুনিয়র ডাক্তারকে মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে সর্বত্রই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০০:৪২
Share:

দাবিসনদ: ‘বিচার চাই’— সেই বার্তা দিতেই পথে চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে পরিষেবা সচল রেখেই।

দিনভর রোগীদের জন্য পরিষেবা সচল রেখেই জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে হামলার প্রতিবাদে সরব হলেন জেলার তিন বড় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। বুকে কালো ব্যাজ করে প্রতীকী প্রতিবাদের পাশাপাশি বোলপুর ও রামপুরহাটে প্রতিবাদ-মিছিলও করেছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোমবার রাতে জুনিয়র ডাক্তারকে মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে সর্বত্রই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। বহির্বিভাগ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানোর কথাও বলা হয়েছিল। অনেক হাসপাতালে বর্হিবিভাগের সাথে সাথে জরুরি ও অন্যান্য বিভাগে কাজকর্ম বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে কিন্তু, অন্য ছবি দেখা গেল। শুক্রবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখা হলেও, রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, তা মাথায় রেখে জরুরি বিভাগের সামনে টেবিল পেতে রোগীদের পরিষেবা দিলেন বোলপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। পরিষেবা পাওয়ায় খুশি রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা।

বোলপুর হাসপাতালের চিকিৎসক, বিশ্ব ভারতীর অধ্যাপক, বিশ্ব ভারতীর প্রাক্তনী , বোলপুর নাগরিক সমাজের মানুষ এ দিন সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে, বুকে কালো ব্যাজ পরে বোলপুর চৌরাস্তা থেকে মৌনী মিছিল করেন। মিছিল শেষ হয় বোলপুর ট্যুরিস্ট লজ মোড়ের কাছে। মিছিল শেষে চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ভাবে এক জুনিয়র ডাক্তারকে নির্যাতন করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দাজনক। আগামী দিনে কোনও ডাক্তারের সঙ্গে যাতে এমন না ঘটে, তা নিশ্চিত করার দাবিতেই আজ আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করুক রাজ্য সরকার।’’ বিশ্বভারতীর অধ্যাপকসভার সহ-সভাপতি কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই অশান্তির অবসান হোক এবং সরকার ডাক্তারের পাশে দাঁড়াক।’’

Advertisement

পরিষেবা সচল থেকেছে সিউড়ি সদর হাসপাতালেও। বৃহস্পতিবার রাতে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সদর হাসপাতালের ৬৭ জন চিকিৎসক ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে চিকিৎসকেরা যাতে পরিষেবা বন্ধ করে না দেন, সে বিষয়ে তাঁদের অনুরোধ করতে শুক্রবার সকালেই হাসপাতালে ছুটে আসেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়, সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়রা। কেমন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, চিকিৎসকদের অবস্থান কী জানতে বিকেলের দিকে হাসপাতালে আসেন অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) প্রশান্ত অধিকারী।

পরিষেবা অবশ্য সকাল থেকেই পেয়েছেন রোগীরা। সভাধিপতি পরে বলেন, ‘‘ইস্তফা দেওয়ার যে খবর রটেছিল সেটা গুজব। বীরভূমে তেমন কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। প্রশাসন ও আমরা সব সময় চিকিৎসকেদের পাশে আছি।’’

যদিও প্রশাসনের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে চিকিৎসকেরা স্পষ্ট করেছেন, মোটেই গুজব নয়, গণ-ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ তাঁরা করেছেন মিলিত ভাবে। রাজ্য জুড়ে তাঁদের উপরে যে ‘আক্রমণ’ ও ‘প্রশাসনিক অসহযোগিতা’ তৈরি হয়েছে, সেই পরিবেশে কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তাই ইস্তফার ইচ্ছে প্রকাশ থেকে সরে যাবেন না।

বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলেছেন, ‘‘গণ-ইস্তফা সংক্রান্ত কাগজ হাতে পাইনি। তবে চিকিৎসকেরা স্বাভবিক পরিষেবা দিয়েছেন।’’ জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলেন, ‘‘কোন পরিস্থিতিতে গণ-ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা, সেটা তাঁরা প্রশাসনের কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমানে ব্যক্ত করেছেন। কী কী দাবি পূরণ হলে তাঁরা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াবেন সেটাও জানিয়েছেন। আবার এ-ও জানিয়েছেন, অসহায় রোগীরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন, এমন পদক্ষেপ তাঁরা করবেন না।’’

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩৭ জন চিকিৎসক অবশ্য শুক্রবার গণ-ইস্তফা দিয়েছেন বলেই দাবি করেছেন। যদিও সিউড়ির মতো তাঁরাও রোগী পরিষেবায় কোনও গাফিলতি দেখাননি। সকাল থেকেই হাসপাতালের সব বিভাগ অন্য দিনগুলির মতোই চালু থেকেছে।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) রামপুরহাট ইউনিটের পক্ষ থেকে রামপুরহাট মহকুমাশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। চিকিৎকদের ইস্তফা প্রসঙ্গে আইএমএ-র রামপুরহাট শাখার সম্পাদক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে আবেদন করেও প্রশাসনের সদর্থক পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছেন না। এর ফলে চিকিৎসকরা উদবিগ্ন। তারা কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলছেন। সেই কারণে ইস্তফা দিয়েছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, এনআরএসের ঘটনার প্রতিবাদে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চিকিৎসকেরা যখন রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে আবেদন জানিয়েছেন, তখন প্রশাসনের সর্বোচ্চ আধিকারিক চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেই প্ররোচনামূলক কথাবার্তা বলছেন। ‘‘যারা চিকিৎসককে মারধর করেছে, তারা দোষী না চিকিৎসকেরা দোষী?’’—প্রশ্ন দেবব্রতবাবুর।

রামপুরহাট শহরেও এ দিন মৌনী মিছিল বের হয়। হাসপাতালের গেট থেকে মিছিল জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে শেষ হয় মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে। মিছিলে পা মেলান রামপুরহাট মেডিক্যালের চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ ও কর্মীদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন