জেলায় চালু দু’টি প্রকল্প

‘রূপশ্রী’-র বিয়েতে জোর রেজিস্ট্রেশনে

পঞ্চায়েত ভোটের মুখেই প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘মানবিক’ ও দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে সাহায্যে করতে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। আজ, রবিবার, ১ এপ্রিল থেকে এই দু’টি প্রকল্পই চালু হতে চলেছে জেলায় জেলায়।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪২
Share:

গঙ্গাজলঘাটিতে ‘রূপশ্রী’-র জন্য আবেদন। নিজস্ব চিত্র

মেয়ের ভালর কথা সত্যি সত্যি ভাবলে ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’ বলে তাকে পাত্রস্থ করা ঠিক নয়। নির্দিষ্ট বয়স হওয়া দরকার। তার পরে বিয়ে। আর সেটা অবশ্যই নথিভুক্তি (রেজিস্ট্রেশন) করে। ওই কাগুজে প্রমাণটাই অনেক কাজের। ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই সমস্ত ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগী হল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। এর জন্য স্থানীয় ম্যারেজ রেজিস্টারদের নামের তালিকা বানানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ব্লকে ব্লকে।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটের মুখেই প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘মানবিক’ ও দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে সাহায্যে করতে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। আজ, রবিবার, ১ এপ্রিল থেকে এই দু’টি প্রকল্পই চালু হতে চলেছে জেলায় জেলায়। প্রস্তুতিতে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে বৈঠক হয়েছে। সেখানেই প্রকল্পগুলি সঠিক ভাবে রূপায়ণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০ শতাংশ বা তার বেশি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন যে সমস্ত মানুষের আয় বছরে ১ লক্ষ টাকা বা তার কম, রাজ্য সরকার ‘মানবিক’ প্রকল্পে প্রতি মাসে তাঁদের ১,০০০ টাকা ভাতা দেবে। যাঁরা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন তাঁরাও এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।

Advertisement

অন্য দিকে, ‘রূপশ্রী প্রকল্পে’ দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে ২৫ হাজার টাকা সাহায্য করা হবে। সে ক্ষেত্রে ওই পরিবারের বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকা বা তার কম হতে হবে। পাত্রীর বয়স হতে হবে কম করে ১৮ বছর। পাত্রের নিদেনপক্ষে ২১। প্রকল্পের টাকা সরাসরি পাত্রীর ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে।

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা। যোগ দিয়েছিলেন জেলার তিন মহকুমাশাসক ও ২২ জন বিডিও। জেলাশাসক গ্রামে গ্রামে দু’টি প্রকল্পের প্রচার চালানোর নির্দেশ দেন। বিডিও-দের বলা হয়েছে নিজেদের এলাকায় প্রচার করতে। পুরশহরগুলিতে প্রকল্প রূপায়ণের বিশেষ দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহকুমাশাসকদের।

আইনি ভাবে বিয়ে নিবন্ধীকরণের চল জেলায় এখনও তেমন নেই। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ বিয়েরই নিবন্ধীকরণ হয় না। ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে বিয়ে দেওয়ায় সাহায্য করবে সরকার। সেটায় খরচের সুরাহা হবে। কিন্তু বিয়ে মানে একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার। সে ক্ষেত্রে পথচলার শুরুতে জাঁকজমক করার চেয়ে বেশি জরুরি বৈবাহিক অধিকারের ভিত পোক্ত করা। বিয়ের নিবন্ধীকরণ হলে স্ত্রী হিসাবে আইনি স্বীকৃতি মেলে। অধিকারটা একেবারে খাতায়-কলমে নিশ্চিত হয়ে যায়। এই কথাটাই সবাইকে বোঝাতে প্রশাসন নানা ভাবে উদ্যোগী হয়েছে।

জেলাশাসক বৈঠকে বিডিও-দের নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েত ভিত্তিক ম্যারেজ রেজিস্টারদের তালিকা বানাতে। ম্যারেজ রেজিস্টারদের ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের বৈঠকেও ডাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যেও বিবাহ নিবন্ধীকরণের চল হোক। সেই লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত। প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার আগে ব্লকের আধিকারিকেরা যখন উপভোক্তার বাড়িতে যাবেন, তখনই বিবাহ নিবন্ধীকরণের ব্যাপারে পাত্রী ও অভিভাবকদের সচেতন করবেন।”

জেলাশাসকের নির্দেশ মতো ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিডিও-রা। বিডিও (গঙ্গাজলঘাটি) মৃন্ময় মণ্ডল বলেন, “দু’টি প্রকল্প নিয়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পঞ্চায়েতের প্রধানদের স্থানীয় ম্যারেজ রেজিস্টারদের নামের তালিকা বানাতে বলা হয়েছে।” বিডিও (ওন্দা) শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “স্থানীয় ম্যারেজ রেজিস্টারদের নাম ও ফোন নম্বরের তালিকা বানিয়ে উপভোক্তাদের বাড়িতে দিয়ে আসা হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের জন্য গঙ্গাজলঘাটি ও ওন্দা ব্লকে একাধিক আবেদন জমা পড়ে গিয়েছে। গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের দেউলি গ্রামের এক যুবতীর আবেদন শনিবারই অনুমোদন করা হয়েছে। বিডিও-র দাবি, আবেদনকারী শীঘ্রই টাকা পেয়ে যাবেন। মানবিক প্রকল্পটি নিয়েও অনেকে উৎসাহ দেখিয়েছেন। বাঁকুড়া জেলা শারীরিক প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অজিত বীর বলেন, “এই প্রকল্পের ফলে বহু প্রতিবন্ধীই উপকৃত হবেন। তবে যাঁদের শারিরীক প্রতিবন্ধকতা ৪০ শতাংশ, তাঁরাও যাতে এই প্রকল্পের সুবিধা পান সেই দাবি তুলব আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন