প্রচার: ভোটের দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত জটিল মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
দলে তাঁকে ঘিরে জটিলতা কম নেই। কম নেই জল্পনাও। কিন্তু জেলা তৃণমূলের নেতারাও একান্তে মানেন, ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকে জটিল মণ্ডলই শাসকদলের আন্দোলনের অন্যতম মুখ। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয় এলাকার রাজনীতি।
ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা পঞ্চায়েত এলাকার বারগ্রামের বছর চুয়ান্নর জটিল বরাবরই ডাকাবুকো হিসেবে পরিচিত। এক সময় কবাডি এবং ফুটবল খেলার সুবাদে তার পরিচালিত বারগ্রাম পুর্বাশা ক্লাবের নাম ডাক ছিল। জটিলবাবু নিজেও কবাডি এবং ফুটবল খেলতেন। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, সেই সময় থেকে ওই ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। সেই বাহিনী নিয়েই কংগ্রেসের রাজনীতির ছত্রছায়ায় সিপিএমের দোর্দণ্ড প্রতাপের দিনেও সমানে টক্কর দিয়েছেন। সেই সময় তাঁর দাপটেই সিপিএমের এক তাবড় নেতাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয় বলে অনেকের দাবি। তার পরে সদলবলে তৃণমূলে ঢোকেন তিনি। দলের ব্লক সভাপতি থেকে জেলা সম্পাদকও হন। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল-বিজেপি জোটে পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি, ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন। ২০১১ সালে ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে নির্বাচনে জিতে জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ হন।
তৃণমূলের অন্দরের একটি সূত্রের খবর, তার পর থেকেই জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বালির ঘাট এবং সিভিক ভলান্টিয়ার্স নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তার জেরে দলের জেলা এবং ব্লক কমিটিতে ঠাঁই হয়নি তাঁর। এমনকি তাঁর আশায় জল ঢেলে ২০১৬ সালে বিধানসভার প্রার্থী করা হয় অভিজিৎ রায়কে। দলের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনের কাজ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুগামীদের দিয়ে বিক্ষোভ সংগঠিত করারও অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই সময় দ্রুত জায়গা করে নেন জটিলের বিরোধী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ব্লক সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্র।
ওই নির্বাচনের মুখে কোটসুরের এক প্রকাশ্য সভায় অনুপস্থিত জটিলকে সমঝে দিতে অনুব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বিডিও এবং ওসিকে বলছি শুনে রাখুন, ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকে নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রই শেষ কথা।’’ তার পরই অবশ্য অবস্থা বেগতিক দেখে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট প্রচারে দেখা যায় জটিলবাবুকে। দলের কর্মী, সমর্থকদের একাংশ অবশ্য বলেছেন, ‘‘যে যাই বলুক, এলাকার আন্দোলনে এখনও জটিল মণ্ডল অন্যতম বল-ভরসা।’’
জেলা সভাপতির সঙ্গে দূরত্ব আর কমেনি। এ বারে জটিলবাবুর নির্বাচনী এলাকা ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের জেলা পরিষদের দুটি আসনই তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত। গত নির্বাচনে লাভপুর থেকে নির্বাচিত সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে সিউড়ি ২ ব্লকে, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নানুরের কেরিম খানকে লাভপুরে, এমনকি ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মহম্মদবাজার ব্লক এলাকা থেকে জেলা পরিষদের প্রার্থী করেছে দল। কিন্তু, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জটিলকে অন্যত্র জেলা পরিষদের টিকিট দেওয়া হয়নি।
জটিল ষাটপলশা এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, তাঁর লক্ষ্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আসন। কিন্তু, তাই নিয়েও সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, একই লক্ষ্য নিয়ে দাসপলশা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করতে নেমেছেন ব্লক সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রও। সময়ই বলবে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। দু’জনেই অবশ্য মুখে বলেছেন, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নেব।’’ সেটাও অবশ্য সময়ই বলবে।