মনোনয়ন সব দলের ঝঞ্ঝাটে

ব্যতিক্রম বাঁকুড়া ১

বাঁকুড়া জেলার বাইশটি ব্লকের মধ্যে বাঁকুড়া ১ নিয়ে পুরো মনোনয়ন পর্বে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। বিজেপি, বামফ্রন্ট, তৃণমূল— সব দলই জানাচ্ছে, তাদের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে মনোনয়নপত্র জমা করতে পেরেছেন সেখানে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাহারায় পুলিশ। তার পরেও হেলমেট আর কাপড়ে মুখ ঢেকে এক দল সশস্ত্র লোক দাপিয়ে বেরিয়েছে বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্লক, এমনকী মহকুমাশাসকের অফিসের সামনেও। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। বাঁকুড়া ১ ব্লক।

Advertisement

বাঁকুড়া জেলার বাইশটি ব্লকের মধ্যে বাঁকুড়া ১ নিয়ে পুরো মনোনয়ন পর্বে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। বিজেপি, বামফ্রন্ট, তৃণমূল— সব দলই জানাচ্ছে, তাদের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে মনোনয়নপত্র জমা করতে পেরেছেন সেখানে। জেলা পরিষদে ওই ব্লক এলাকার দু’টি আসন রয়েছে। তাতে বিরোধীদের কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি। তবে জেলা পরিষদ স্তরের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হচ্ছিল মহকুমাশাসকের অফিসে। বিরোধীদের অভিযোগ, সেখানে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছে।

জেলার খাতড়া মহকুমার সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু খাতড়া থেকে সিমলাপাল, রাইপুর থেকে রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, হিড়বাঁধ, ইঁদপুর ব্লক অফিস, এমনকী মহকুমাশাসকের (খাতড়া) দফতরের সামনেও দুষ্কৃতীদের জমায়েত ছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, হামলাও হয়েছে। বিষ্ণুপুর মহকুমায় মনোনয়ন জমা পড়েছে শুধু জেলা পরিষদের দু’টি আসেন। আর কোনও গ্রামপঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে বিরোধী দলের মনোনয়ন নেই। সদর মহকুমার শালতোড়া, ছাতনা, বাঁকুড়া ২, বড়জোড়া, মেজিয়া, ওন্দা— অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের আটকে দেওয়ার। বাদ পড়েনি মহকুমাশাসকের (বাঁকুড়া সদর) দফতরও।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়া ১ ব্লকে উল্টো ছবিটা হল কী ভাবে?

এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তৃণমূলের বাঁকুড়া ১ ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি ধবল মণ্ডল বলেন, “মনোনয়ন পর্ব চলাকালীন আমি খবরের কাগজ পড়া বা টিভি দেখার সময় পাইনি। তাই কোথায় কী হয়েছে আমার জানা নেই। আমাদের ব্লকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে।”

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাঁকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির ১৭টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ব্লকের ছ’টি গ্রামপঞ্চায়েতের সব ক’টিই তৃণমূলের দখলে। এ বারের নির্বাচনেও প্রায় সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রামপঞ্চায়েতে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

ধবলবাবু বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার একটার পর একটা জনবিরোধী নীতি নিচ্ছে। তার কোপ সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনে এসে পড়ছে। বাম আমলে এই এলাকায় ছিটেফোঁটাও উন্নয়ন হয়নি। গত পাঁচ বছরে মানুষ বুঝেছে উন্নয়ন কাকে বলে। সেই উন্নয়নই আমাদের হাতিয়ার।”

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির প্রতিক্রিয়া, ‘‘তাহলে কি অন্য ব্লকের তৃণমূলের নেতারা টের পেয়ে গিয়েছেন, যে তাঁদের বলা উন্নয়নটা হয়েছে শুধু বিজ্ঞাপনেই? তাই মনোনয়ন পর্বে ব্লকে সন্ত্রাস চালাতে হয়েছে? হতে পারে, বাঁকুড়া ১ ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব সন্ত্রাস চালানোর নির্দেশ মন থেকেই মেনে নিতে পারেননি।”

বিজেপি নেতৃত্ব আবার বলছেন, কৌশলগত ত্রুটির জন্যই বাঁকুড়া ১ ব্লকে উল্টো ছবি হয়ে গিয়েছে। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, ‘‘মহকুমাশাসকের দফতরে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের মনোনয়ন দাখিল করা যাবে বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল। তাই শাসকদল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মহকুমাশাসকের দফতর আগালাতেই বেশি শক্তি খরচ করে ফেলে। বাঁকুড়া ১ ব্লকে জমায়েত করার মতো লোকবল ছিল না তৃণমূলের।’’

তাঁর দাবি, মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে প্রথম তিন দিন ওই ব্লকে বিজেপির প্রার্থীরা যাননি। মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা করা সুযোগ যখন দেওয়া হয়, তখন ব্লক অফিসে যান। তিনি বলেন, ‘‘শাসকদলের ভুলেই বাঁকুড়া ১ ব্লক রক্ষা পেয়েছে।”

তবে বিবেকানন্দবাবুর দাবি উড়িয়ে ধবলবাবুর কটাক্ষ, “এই ব্লকে বিরোধীদের অস্তিত্বই আর কতটা যে ওদের আটকাতে আমাদের কৌশল সাজাতে হবে?”

এই তরজার সমান্তরালে, নির্ঝঞ্ঝাটে ব্লকের মনোনয়ন পর্ব মেটায় স্বস্তি পেয়েছেন প্রশাসনের কর্মীরা। এলাকার সাধারণ মানুষও বলছেন, ‘‘এ বার ভোটটাও ভালয় ভালয় মিটুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন