নিজের ভোট নেই যাঁদের, দায়িত্বে তাঁরাই

শুক্রবার সিউড়ির বেণিমাধব ইনস্টিটিউশনে দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রশিক্ষণ হয় ভোটকর্মীদের। বীরভূমের যে ১৩টি পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় ভোট হচ্ছে না, এঁদের সকলেই সেই সব এলাকার বাসিন্দা। ফলে জেলার ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ভোট করাবেন যাঁরা, ভোট দিতে পারেননি তাঁরাই।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০২:১৭
Share:

প্রচার: এই ভোটকর্মীদের কারোরই নেই ভোট। সিউড়ির প্রশিক্ষণ শিবিরে। শুক্রবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

ওঁদের কেউ খুশি নন। নিজের ভোটটাই দিতে পারেননি যে!

Advertisement

শুক্রবার সিউড়ির বেণিমাধব ইনস্টিটিউশনে দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রশিক্ষণ হয় ভোটকর্মীদের। বীরভূমের যে ১৩টি পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় ভোট হচ্ছে না, এঁদের সকলেই সেই সব এলাকার বাসিন্দা। ফলে জেলার ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ভোট করাবেন যাঁরা, ভোট দিতে পারেননি তাঁরাই। প্রশিক্ষণ শেষে এঁদের অনেকেই নাম না প্রকাশের শর্তে বললেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে। এ বারই ভোট দিলাম না।’’ কেউ বললেন, ‘‘কেন গণতান্ত্রিক অধিকার এ ভাবে হরণ করা হবে?’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না থাকায় বীরভূমে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন সীমিত মাত্র ১৪ শতাংশ আসনে। ভোট হচ্ছে রাজনগর, মহম্মদবাজার, ময়ূরেশ্বর ১ এবং আংশিক ভাবে ময়ূরেশ্বর ২, রামপুরহাট ও নলহাটি ব্লকে। জেলায় মোট ২৬৯০ (অতিরিক্ত ১৮টি বুথ ধরে) ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ভোট হচ্ছে মাত্র ৩৬৬টিতে।

Advertisement

প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়ে প্রতি বুথের জন্য প্রয়োজন চার জন ভোটকর্মীর। ফলে সব এলাকায় নির্বাচন হলে যে পরিমাণ ভোটকর্মী প্রয়়োজন ছিল, তার একটা অংশই এ বার ভোটে ডিউটি করবেন। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর মহকুমা) কৌশিক সিংহ বলছেন, ‘‘এ বার যাঁদের এলাকায় নির্বাচন নেই, তাঁদেরই ভোটকর্মী করা হয়েছে।’’

প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, রাজনগর ও মহম্মদবাজারের জন্য সিউড়ি ১ ব্লক থেকে, ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের জন্য সাঁইথিয়া থেকে এবং ময়ূরেশ্বর ১ এর জন্য রামপুরহাট এলাকা থেকে যে সব ভোটকর্মীদের নেওয়া হয়েছে তাঁদের অনেকেই পুর এলাকার বাসিন্দা। বাকি যাঁদের নেওয়া হয়েছে, তাঁদের বাছাই করার আগেই দেখে নেওয়া হয়েছে তিনি কোন পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা, সেই এলাকায় আদৌ ভোট আছে কিনা। তবে প্রতিটি কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা
পুলিশকর্মী, বিশেষ করে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ইলেকশন ডিউটি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। ভোট থাকলে তাঁরা যাতে সংশ্লিষ্ট ব্লক আফিসে গিয়ে ভোট দিতে পারেন।

সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্ব বণ্টনে এ দিন দ্বিতীয় দফায় প্রশিক্ষণ শেষ হয় হাজারখানেক ভোটকর্মীর। ভোটের ডিউটিতে যোগ দেওয়ার আগে নিজেদের ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ ঝরে পড়ে ভোটকর্মীদের গলায়। এ বার ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের একটি বুথে সেকেন্ড পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন পেশায় শিক্ষক, পাড়ুই থানা এলাকার দিঘা গ্রামের বাসিন্দা মুকুল পটুয়া। তিনি বলছেন, ‘‘বহু বছর ধরে ভোট দিচ্ছি। ভোটকর্মী হিসেবেও কাজ করেছি। ভোটদানে এ বারই প্রথম ছেদ পড়ল। আমার এলাকায় এ বার ভোটই নেই। খারাপ লাগছে।’’ প্রায় একই দাবি ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের ভোটকর্মীর দায়িত্বে থাকা খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়ার বাসিন্দা অক্ষয় ধীবরের।

সিউড়ি ১ ব্লকের মল্লিক পঞ্চায়েত ও কড়িধ্যা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা হয়েও ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে দুই স্কুল শিক্ষক পার্থসারথি ঘোষ ও বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রথম জন এ বার প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে রাজগরের একটি বুথের দায়িত্বে। অপর জন মহম্মদবাজারের একটি বুথের দায়িত্বে। উভয়েই বলছেন, ‘‘ভোট দিতে পারলাম না। খারাপ তো লাগবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন