এক তরফা এগিয়ে জেলা পরিষদে

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মোট আসন ৪৬টি। সোমবার ছিল মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৬টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

সুচের ডগায় যতটা মাটি ধরে, সেটুকুও দেবেন না বলে কৌরবরা কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ফেলেছিলেন। আর বাঁকুড়ায় আস্ত একটা জেলা পরিষদের দখল প্রায় চলে এসেছিল তৃণমূলের হাতে। বিনা নির্বাচনে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল তেমনটাই। বিরোধীরা অভিযোগ করছিলেন, নির্বাচনী লড়াইয়ে না গিয়ে লাঠিসোটার যুদ্ধেই এমনটা করছে শাসকদল। রাতে কমিশনের নির্দেশ আসে, আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কাজ।

Advertisement

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মোট আসন ৪৬টি। সোমবার ছিল মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৬টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি।

তবে তিন মহকুমায় ছবিটা এক রকমের নয়। বাঁকুড়া সদরে আসন ১৮টি। বিরোধী মনোনয়ন জমা পড়েছে তার মধ্যে ৩টিতে। বিষ্ণুপুরে ১৩টি আসনের মধ্যে বিরোধী মনোনয়ন জমা পড়েছে ২টিতে। ব্যতিক্রম খাতড়া। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫টি আসনের সবক’টিতেই বিরোধীরা মনোনয়ন জমা করেছেন সেখানে। বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘অ্যাস্টেরিক্সের কমিকসের গল গ্রাম বাবাওরামের মতো এখন দক্ষিণ বাঁকুড়া দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে সন্ত্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করার মতো কোনও জাদু পানীয় সেখানে নেই।’’

Advertisement

আপাতত জেলা পরিষদের দক্ষিণ বাঁকুড়ার প্রায় সব ক’টি আসনে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত কতগুলিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকাননন্দ পাত্র বলেন, ‘‘প্রশাসন শাসকের দলদাস হয়ে পড়েছে। শাসকদলের নির্দেশে নানা অছিলায় মনোনয় বাতিল করে দেওয়া হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে, যদি ভোট হয় তাহলে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় আমরা ভাল ফল করব।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের ‘প্রতিরোধের’ জন্যই তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা করতে পারছেন না। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিষ্ণুপুর মহকুমার জয়পুর, কোতুলপুর, বিষ্ণুপুর ও পাত্রসায়র ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেননি। তবে জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনের মধ্যে ৪৫টিতেই বামফ্রন্ট লড়েছিল। ৫টি আসনে জয়ীও হয় তারা। বড়জোড়া, ইন্দাস, সোনামুখীর মতো কয়েকটি ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েতের দখলও আসে।

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, ‘‘সোমবার পর্যন্ত খাতড়া মহকুমায় একটি বাদে জেলা পরিষদের সব আসনে মনোনয়ন জমা করতে পেরেছি। কিন্তু বাঁকুড়া সদর আর বিষ্ণুপুরে সেটা সম্ভব হয়নি।’’ কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্লক ও মহকুমাশাসকের দফতর ঘিরে শাসকদল আর পুলিশ মিলে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছে। আমাদের প্রার্থীরা ঢুকতেই পারেননি।’’ গত বিধানসভা নির্বাচনেও বড়জোড়া ও সোনামুখী বিধানসভায় জেতে সিপিএম। নেতৃত্বের দাবি, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সোনামুখী ও বড়জোড়া ব্লকের সংগঠন আরও মজবুত করতে বিস্তর কাজ করেছেন তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই দু’টি ব্লকের কোনও স্তরেই প্রার্থী দিতে পারেননি। বিজেপিও দাবি করছে, ওন্দা আর ছাতনা ব্লকে তাদের সংগঠন অনেকটাই মজবুত হয়েছে গত কয়েক বছরে। তবে ওই দু’টি ব্লকের বেশির ভাগ আসনেই এ দিন পর্যন্ত প্রার্থী দিতে পারেনি তারা। বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন চলছে। রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’’

তবে জেলা তৃণমূল নেতা তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ওঁরা সংগঠন গড়ে তুলতে পারেননি আর আমাদের দোষ দিয়ে সেই সহজ সত্যিটা ঢাকার চেষ্টা করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন