কারখানায় উড়ল ধোঁয়া

বাম ও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘটের প্রথম দিনে প্রভাব পড়ল না পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার কলকারখানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

রঘুনাথপুর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৫
Share:

বাঁকুড়ার কেশরা এলাকার একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায়। মঙ্গলবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বাম ও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘটের প্রথম দিনে প্রভাব পড়ল না পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার কলকারখানায়।

Advertisement

অন্য দিনের মতোই মঙ্গলবার স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমার অন্যতম শিল্পাঞ্চল নিতুড়িয়ার কয়লাখনিগুলিতে। উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ির স্পঞ্জ আয়রন কারখানাতেও। সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রঘুনাথপুরের ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও প্রভাব পড়েনি। তবে, ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এ দিন কাজে যোগ দেয়নি বড় অংশের ঠিকা শ্রমিকেরা। স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে সাঁতুড়ির মধুকুণ্ডার বেসরকারি সিমেন্ট কারখানা-সহ জেলার অন্য সিমেন্ট কারখানাগুলিতে। বলরামপুরের শতাধিক লাক্ষা কুঠিগুলিও এ দিন স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন লাক্ষা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রঞ্জিত মাঝি।

তবে, ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে জেলার বিড়ি শিল্পে। ঝালদা ১, ঝালদা ২, আড়শা ও জয়পুর ব্লকে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। জেলার অন্য কয়েকটি ব্লকেও বিড়ি বাঁধার কাজ হয়। বিড়ি শিল্পের যৌথ সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ভীম কুমারের দাবি, ‘‘ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে এ দিন বিড়ি শ্রমিকরা কাজ করেননি।’’

Advertisement

তবে তা মানতে চাননি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রফুল্ল মাহাতো। তাঁর দাবি, ‘‘বিড়ি তৈরির কারখানা জেলায় নেই। মূলত বাড়িতেই বিড়ি তৈরি করেন লোকজন। তাঁরা এ দিনও বিড়ি বেঁধেছেন।’’ তাঁর দাবি, জেলার ১৭টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা, ছ’টি সিমেন্ট কারখানা-সহ সর্বত্রই স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে।

এ দিন ধর্মঘটের সমর্থনকারীদের সে ভাবে শিল্পাঞ্চলে মিছিল করতে দেখা যায়নি বললেই চলে। আগে তাঁরা কারখানার সামনে পিকেটিং করতেন। এ দিন তাও দেখা যায়নি। ইসিএল সূত্রের খবর, ধর্মঘটের দিনেও নিতুড়িয়ার দুই কয়লাখনি পারবেলিয়া ও দুবেশ্বরীতে স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে। তবে সাঁওতালডিহিতে বিসিসিএলের ভোজুডি কোল ওয়াশারিতে শ্রমিক ও কর্মীরা ধর্মঘটের সমর্থনে কাজে যোগ দেননি বলে সেখানে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সিটুর জেলা সভাপতি নিখিল মুখোপাধ্যায়।

বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি ও মেজিয়ার কলকারখানাগুলিও শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। তবে, কারখানার মাল পরিবহণকারী বড় গাড়ি সংখ্যায় কিছুটা কম চলতে দেখা গিয়েছে।

গাড়ি মালিকদের একাংশের দাবি, রাস্তায় বিপত্তির আশঙ্কায় কিছু মালিক গাড়ি নামাতে চাননি। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলেও কাজ হয়েছে। বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক (শিল্প বিষয়ক) প্রবীর সরকার দাবি করেন, “ধর্মঘটের কোনও প্রভাব কারখানাগুলিতে পড়েনি।’’

কেন প্রভাব পড়ল না? সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সংগঠনের বড়জোড়া ব্লক সভাপতি বানেশ্বর গুপ্তের দাবি, ‘‘শ্রমিকেরা ধর্মঘটকে সমর্থন করলেও পুলিশের বাড়তি সক্রিয়তা ও চাকরি হারানোর ভয়েই কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারখানাগুলির সামনে পুলিশ প্রায় শিবির করেছিল।’’

বড়জোড়ায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে কারখানার সামনে প্রচারও করতে দেখা গেলেও ধর্মঘটি শ্রমিক সংগঠনগুলিকে দেখা যায়নি বললেই চলে। বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “শ্রমিকেরা বুঝেছেন ধর্মঘট করে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। তাই তাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন