পাচার নিয়ে অভিযোগ বিজেপি-র

সভা থেকে কিছু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কয়লা, বালি পাচার থেকে সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি এবং অনুন্নয়ন নিয়ে কটাক্ষও ভেসে এল। মারের বদলে মার দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন বিজেপি-র নেতানেত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গঙ্গাজলঘাটি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৭
Share:

মঞ্চে: সুভাষ সরকার, মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়ার পরে বাঁকুড়া, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিজেপি। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুর মোড় সংলগ্ন ভিড়ে ঠাসা মাঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ তুলে গেলেন বিজেপি নেতারা। সভা থেকে কিছু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কয়লা, বালি পাচার থেকে সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি এবং অনুন্নয়ন নিয়ে কটাক্ষও ভেসে এল। মারের বদলে মার দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন বিজেপি-র নেতানেত্রীরা।

Advertisement

বীরভূম থেকে পুরুলিয়া, সেখান থেকে বাঁকুড়ায় পর পর সভা করে বিজেপির শীর্ষ রাজ্য নেতৃত্ব একপ্রকার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছেন। এ দিন সভায় ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায় প্রমুখ। দিলীপবাবু এই মঞ্চ থেকে রাজ্যে পরিবর্তনের পরিবর্তন চাইলেন। আর সুভাষবাবু অভিযোগ তুললেন, “কেন্দ্র সরকার গরিব মানুষের জন্য বাড়ি, শৌচালয় তৈরির টাকা পাঠাচ্ছে। অথচ উপভোক্তাদের হকের সেই পাওনা পেতে তৃণমূল নেতাদের টাকা দিতে হচ্ছে!”

মুকুল অভিযোগ তোলেন, ‘‘পুলিশের মদতে এই জেলা থেকে বালি, কয়লা, পাথর পাচার করে টাকা রোজগার করছে তৃণমূল। এই সব আর বেশি দিন চলবে না।” রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। সাত বছরে রাজ্যে কী শিল্প এসেছে, তা নিয়ে তিনি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বেকার যুবকদের সিভিক পুলিশের চাকরি দিয়ে দিনভর খাটিয়ে মারছে, আর বেতন দিচ্ছে মোটে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।” কিসানমান্ডি বন্ধ থাকা থেকে ছাত্রছাত্রীদের ভাঙা সাইকেল দেওয়া হচ্ছে বলেও কটাক্ষ করেন দিলীপবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকারি প্রকল্পের নামে রাজ্যে দুর্নীতি হচ্ছে।”

Advertisement

বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ, দুর্লভপুরে সভার জন্য তৃণমূলের চাপে পুলিশ প্রথমে মাঠ দিতে রাজি হয়নি। সভার এক দিন আগে মঞ্চও ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিল তৃণমূলের স্থানীয় লোকজন। তার পরেও এ দিনের সভায় ছিল ঠাসা ভিড়। আশপাশের বাড়ির ছাদেও ঠাসাঠাসি লোকের ভিড় দেখা গিয়েছে। বিজেপি এত লোক কোথা থেকে নিয়ে এল, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূলের একাংশে।

পুলিশের হিসেবে এ দিন বিজেপি-র সভায় লোক হয়েছিল কমবেশি চার হাজার। যদিও বিজেপির দাবি, ভিড় ২০ হাজারের নীচে নয়। মুকুলবাবু বলেন, “এখানকার বিজেপি কর্মীরা রাত জেগে মঞ্চ আগলে রেখেছেন। তৃণমূলের এত হুমকি, চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করেও যে পরিমাণ মানুষ এই সভায় যোগ দিয়েছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে তৃণমূল জমি হারাচ্ছে।”

তৃণমূলের হামলার বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের রুখে দাঁড়ানোর নিদান দিয়ে গিয়েছেন লকেট। তাঁর অভিযোগ, “আমরা অভিযোগ করলে, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করে না। তাই আমরা আর অভিযোগ করব না। তৃণমূল আমাদের মারতে এলে আমরাও পাল্টা মারব। ততক্ষণ মারব, যতক্ষণ না মার খেয়ে তৃণমূল কর্মীরা থানায় অভিযোগ করছে।” তৃণমূল ছেড়ে কয়েকজন তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের।

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগেও কুৎসা হয়েছে। কিন্তু বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই আস্থা রেখেছেন। কিছু নেতা ফের কুৎসা রটিয়ে ভোটের বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন। ভোটের পর তাঁদের আর দেখা যাবে না।’’ আর দুর্লভপুরের বাসিন্দা সাংসদ সৌমিত্র খানের কটাক্ষ, “বিজেপি সভায় লোক নিয়ে যে গলা চড়াচ্ছে, ওরা জানেন কি, আমাদের বুথ কমিটির সভায় এর থেকে বেশি লোক হয়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন