ফের অশান্ত পুরুলিয়া, সংঘর্ষ বিজেপি-তৃণমূলে

প্রচারের শেষ দিনেও রক্ত ঝরল পুরুলিয়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে রড মেরে এক বিজেপি কর্মীর কপাল ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল পুরুলিয়া শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তেলকলপাড়া হরিমন্দির এলাকা। আহত সঞ্জয় দাস নামে ওই বিজেপি কর্মীকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর কপালে আঘাত রয়েছে। সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মীও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৮
Share:

ইটের ঘায়ে মাথা ফেটেছে বিজেপি কর্মীর। —নিজস্ব চিত্র

প্রচারের শেষ দিনেও রক্ত ঝরল পুরুলিয়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে রড মেরে এক বিজেপি কর্মীর কপাল ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল পুরুলিয়া শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তেলকলপাড়া হরিমন্দির এলাকা। আহত সঞ্জয় দাস নামে ওই বিজেপি কর্মীকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর কপালে আঘাত রয়েছে। সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মীও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিজেপি ভোটের আগে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বলে দাবি করলেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে মারধরের ঘটনাটিকে পারিবারিক গোলমাল বলেই দাবি করা হয়েছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল বিভাগে ভর্তি ওই বিজেপি কর্মী জানান, তেলকলপাড়া হরিমন্দিরের কাছে তাঁদের দলের একটি পথসভা ছিল। দলের কয়েকজনের সঙ্গে তিনি তখন মঞ্চ তৈরির কাজ করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘হঠাৎ এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী দত্তর স্বামী সোমনাথ দত্ত বেশ কিছু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা চালান। আমার কপালে রডের ঘা মারে। সঙ্গে সঙ্গে রক্তে মুখ ভেসে যায়।’’ বিজেপি কর্মী সাগর দাস বলেন, ‘‘কাছেই পুলিশের টহল ছিল। তাঁরা ছুটে এসে সঞ্জয়দাকে বাঁচান।’’ সঞ্জয়ের দাবি, বিজেপির প্রার্থীর হয়ে এলাকায় প্রচার করায় বুধবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় সোমনাথবাবু তাঁকে বিজেপি ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। কিন্তু সেই হুমকি অগ্রাহ্য করাতেই তাঁকে মারধর করা হল বলে তাঁর অভিযোগ। তবে পুলিশ না থাকলে তাঁকে খুন করে ফেলা হতো বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

হাসপাতালে একই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তৃণমূল কর্মী খেদন দাস। তাঁর দাবি, ‘‘বুধবার সন্ধ্যায় তেলকলপাড়া হরিমন্দির এলাকায় তৃণমূলের সভা হয়। এ দিন সকালে তাই ওই জায়গাটা সাফাই করতে এসেছিলাম। তখন মাটিতে পড়ে থাকা বিজেপির একটা পতাকা তুলে দিতে বলে ওদের এক কর্মী। আমি তা ছোঁব না বলতেই বিজেপি কর্মীরা আমার মুখে ও মাথায় ঘুঁষি মারে।’’

Advertisement

নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক হামলা থেকে বরাবরই দূরে থাকা এই শহরে এ বার পুরভোটে একের পর এক গণ্ডগোল বেঁধেই চলেছে। প্রায় সব বড় দল অভিযোগ তুললেও বেশি অভিযোগ করেছে বিজেপি। কিছু দিন আগে এই ১১ নম্বর ওয়ার্ডেই এক বিজেপি কর্মীর বাবাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে মার খেতে হয় ওই বিজেপি কর্মীর পড়শি ও এলাকার এক কিশোরকেও। তিনজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

এ দিকে পুরুলিয়া শহরে দলের উপর একের পর এক হামলা চলতে থাকায় এ দিন বিজেপির এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানান। এই দলে বিজেপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্য বি পি সিংহ দেও, রাজ্য সম্পাদক মণীষা চট্টোপাধ্যায় ও জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। বি পি সিংহ দেও বলেন, ‘‘কখনও আমাদের অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে আগুন লাগানো হচ্ছে, কখনও কোন কর্মীর বাবাকে মারধর করা হচ্ছে, কখনও পতাকা-ব্যানার খুলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এ দিনও আমাদের এক কর্মীকে মারা হয়েছে। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে আমাদের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জেলাশাসককে সব জানিয়েছি।’’ বিকাশবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল আমাদের ভয় পাচ্ছে বলেই আক্রমণের রাস্তা বেছে নিয়েছে। তবে ভোটারদের তারা দমাতে পারবে না।’’ এ দিনের হামলার ঘটনাটি তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করা হয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।’’ তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এ দিন বিকেল পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে করা হয়নি।

১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী সোমনাথ দত্ত বলেন, ‘‘এটা মোটেই রাজনৈতিক ঝামেলা নয়। একেবারেই পারিবারিক বিবাদ কেন্দ্রিক ঘটনা। ঝামেলা থামাতে আমি সেখানে গিয়েছিলাম।’’ জেলা তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘ওই সভাস্থল থেকে তৃণমূল নেত্রীর ছবি সরানো নিয়ে বচসা হয়েছে। তবে এ জন্য কাউকে মারধর করা হয়নি। বিজেপি একটু সরে গিয়ে সভা করলে কোনও সমস্যা হতো না।’’ তাঁর দাবি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ ভাবে বিজেপি নিজেরা সমস্যা তৈরি করে নজর টানার চেষ্টা করছে।

এ দিকে, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিমান সরকার অভিযোগ করেছেন, বুধবার রাতে তাঁর ব্যানার ও পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, যে ভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চলছে তার জেরে শহরের প্রায় সব বুথকেই স্পর্শকাতর হিসেবে দেখছে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন