লেখক নিয়ে মাধ্যমিকে রশিদা

মাড়গ্রামের বাগানপাড়ার বাসিন্দা রশিদার বাবা নাসির মোমিন দিনমজুর। যখন যেমন কাজ পান, তেমন কাজ করেন। অনেক ছোট বয়সে রশিদার মা মারা যান। তিন বোন, এক ভাইয়ের সংসারে রশিদাদের দুই বোন জন্মান্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫৭
Share:

রাইটার নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে রশিদা খাতুন। সোমবার মাড়গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

ইচ্ছে থাকলেও আগের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারেনি মাড়গ্রামের বাগানপাড়ার জন্মান্ধ রশিদা খাতুন। গত বছর স্কুল কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন করেও লেখক না পেয়ে স্বপ্নপূরণ হয়নি। এক বছর অপেক্ষার পরে প্রশাসনের উদ্যোগে লেখক পেয়ে নলহাটি হাইমাদ্রাসা স্কুলে মাধ্যমিক দিল রশিদা। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিয়ে খুশি রশিদা। তার কথায়, ‘‘মাধ্যমিক দিতে পারাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের।’’

Advertisement

মাড়গ্রামের বাগানপাড়ার বাসিন্দা রশিদার বাবা নাসির মোমিন দিনমজুর। যখন যেমন কাজ পান, তেমন কাজ করেন। অনেক ছোট বয়সে রশিদার মা মারা যান। তিন বোন, এক ভাইয়ের সংসারে রশিদাদের দুই বোন জন্মান্ধ। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। ছোট থেকেই রশিদা শুনে শুনে কবিতা, গান মুখস্ত বলতে পারে। অন্যের কাছ থেকে শুনে শুনে বাড়ির কাছের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডী পেরোনের পরে পড়াশোনায় বাড়তি আকর্ষণ পেয়ে বসে। ভর্তি হয় মাড়গ্রাম হাইমাদ্রাসায়। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে লেখক চেয়ে আবেদনও করে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এমন ছাত্রীর জন্য লেখক জোগাড় করে উঠতে পারেনি। অভিযোগ, রশিদাকেই লেখক জোগাড় করতে বলে স্কুল। এই টানাপড়েনে গত বছর মাধ্যমিকে বসতে পারেনি।

গোটা বিষয়টি এলাকার শিক্ষানুরাগী কয়েক জনের নজরে আসতেই তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। রামপুরহাট মহকুমাশাসক এবং সংখ্যালঘু কমিশনের চেষ্টায় রশিদা স্কুলেরই নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে লেখক হিসেবে পায়। পরীক্ষা বৈতরিণী পার হতে রশিদার হাল সেই ছাত্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য অসহযোগিতার কথা মানতে চাননি। মাড়গ্রাম হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক গোলাম মহম্মদ বলেন, ‘‘স্কুলে আসুন। তবেই সব কিছু জানাব।’’ অন্য দিকে, মাড়গ্রামের শিক্ষানুরাগীরা জানান, পড়াশোনার প্রতি স্বাভাবিক আগ্রহ রশিদাকে পরীক্ষায় বসতে সাহায্য করেছে। ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী রশিদাও। তার কথায়, ‘‘আশা করা যায় সকলের শুভ কামনায় সাফল্য পাবই।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন