মুক্তির পরে মৃত্যু চিতল হরিণের

বনে মুক্ত করা হয়েছিল ৩০টি চিতল হরিণকে। দিন দুয়েকের মধ্যেই তিনটির দেহ উদ্ধার হল। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ মনে করছেন, কুকুরের আক্রমণেই সেগুলির মৃত্যু হয়েছে

Advertisement

  রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

  বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৭
Share:

অবলা: নতুনডি গ্রামের কাছের জঙ্গল থেকে একটি মৃত হরিণকে নিয়ে আসা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।

বনে মুক্ত করা হয়েছিল ৩০টি চিতল হরিণকে। দিন দুয়েকের মধ্যেই তিনটির দেহ উদ্ধার হল। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ মনে করছেন, কুকুরের আক্রমণেই সেগুলির মৃত্যু হয়েছে। পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পিছন থেকে কোনও প্রাণী হরিণগুলির মাংস খুবলে নিয়েছে।

Advertisement

ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা ঘটবে সেটা বুঝতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এমনটা আর না ঘটে।’’ রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘হরিণ ছাড়ার পরিকল্পনা গত এক বছর ধরে চলছিল। স্থানীয় কোনও রিপোর্টেই কুকুরের উপদ্রবের কথা বলা হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

গত রবিবার সুরুলিয়া মিনি জ়ু থেকে ৩০টি হরিণকে ছাড়া হয় বান্দোয়ানের যমুনা বনাঞ্চলের নতুনডির জঙ্গলে। বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ কুইলাপাল বিটের পাহাড়পুর গ্রামের কাছে একটি স্ত্রী হরিণকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসী। খবর পেয়ে সেটিকে উদ্ধার করে বন দফতরের কর্মীরা বিট অফিসে নিয়ে যান। চোট গুরুতর হওয়ায় কিছুক্ষণ পরেই হরিণটির মৃত্যু হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেটির ওজন প্রায় দশ কিলোগ্রাম।

Advertisement

এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ আবার নতুনডি গ্রামের অদূরে একটি স্ত্রী হরিণকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন নতুনডি গ্রামের বাসিন্দারা। সেটিকে উদ্ধার করে মোটরবাইকে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিট অফিসে। দুপুর ৩টে নাগাদ আবার একটি হরিণের দেহ উদ্ধার হয় নতুনডি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল থেকে। সেটিরও পিছন থেকে কোনও প্রাণী মাংস খুবলে নিয়েছিল। হরিণগুলির দেহের ময়নাতদন্ত হচ্ছে।

এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বনে ছাড়ার পরেই হরিণগুলির পিছু নিয়েছিল এক দল কুকুর। তাড়া খেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে হরিণগুলি। সোমবার একটি হরিণকে জখম হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন বন দফতরের কর্মীরা। প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে আবার সেটিকে জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ বন দফতরের কুইলাপাল অফিস থেকে একশো মিটার দূরে, চালুনিয়া গ্রামে একটি পুরুষ হরিণকে তাড়া করে নিয়ে যায় সাত-আটটি কুকুর। গ্রামবাসীর দাবি, প্রাণে বাঁচতে একটি জলাশয়ে গিয়ে পড়ে হরিণটি। পিছু হটে কুকুর। গ্রামবাসীই হরিণটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে ভয়ে সেটি জঙ্গলের দিকে ছুটে পালায়। গ্রামবাসীর দাবি, কিছুক্ষণ পরে আবার হরিনটিকে তাড়া করে কুকুরগুলি। পিছন থেকে শরীরে একাধিক জায়গায় দাঁত বসায়। কুকুর তাড়িয়ে প্রাণীটিকে উদ্ধার করেন গ্রামের লোকজনই। একটি ভ্যানোতে চাপিয়ে সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় কুইলাপাল বিট অফিসে। গভীর রাতে আসেন পশু চিকিৎসক। হরিণটিকে চিকিৎসার জন্য ছোট গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সুরুলিয়া মিনি জুতে।

পুরুলিয়ার সুরুলিয়া মিনি জুতে হরিণের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। সেন্ট্রাল জু অথরিটির অনুমতি নিয়ে তার মধ্যে ৩০টিকে ছাড়া হয় নতুনডির জঙ্গলে। সেই সময়ে ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) জানিয়েছিলেন, নতুনডিতে ১৪৫ হেক্টর ঘন জঙ্গল রয়েছে। তার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বাঁকুড়ায় বারোমাইল জঙ্গল। সেখানে আরও হরিণ রয়েছে। ফলে খাপ খাইয়ে নিতে ওই ৩০টি হরিণের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তার পরেও কেন এমনটা হল, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

পাহাড়পুর, নতুনডি ও চালুনিয়ার বাসিন্দাদের একাংশ এবং বন দফতরের একটি সূত্রের মতে, কোন দিকে গভীর জঙ্গল সেটা ঠাহর করে উঠতে পারছে না হরিণগুলি। লোকালয়ের দিকে চলে আসছে। তার উপরে, দীর্ঘ দিন মিনি জুতে থাকার ফলে সেগুলি বেশ কিছুটা মানুষ ঘেঁষা। ফলে লোকালয়ে চলে আসার প্রবণতা থাকতেই পারে বলে দাবি করেছে বন দফতরের একটি সূত্র। মনে করা হচ্ছে, লোকালয়ের দিকে আসার সময়েই কুকুরের দল হরিণগুলিকে তাড়া করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন