বিস্ফোরণে ধুলোয় মিশল পাকা বাড়ি

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জোবি থমাস জানান, কোনও ভাবে সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। এই নিয়ে গত দেড় বছরে পাঁচটি বিস্ফোরণ হল খয়রাশোলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লোকপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০২:২৪
Share:

শেখ শামির চাঁদের বাড়ি। ফাইল চিত্র।

ফের বিস্ফোরণে কাঁপল খয়রাশোল। মঙ্গলবার সকাল ন’টা নাগাদ লোকপুরের ডেমুরটিটা গ্রামে বিস্ফোরণে উড়ে যায় শেখ শামির চাঁদের বাড়ি। পুলিশের অনুমান, ওই বাড়িতে প্রচুর দিশি ও সকেট বোমা মজুত ছিল। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জোবি থমাস জানান, কোনও ভাবে সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। এই নিয়ে গত দেড় বছরে পাঁচটি বিস্ফোরণ হল খয়রাশোলে। সব মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। মঙ্গলবারের ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নেই। কী কারণে এত বোমা মজুত করা হয়েছিল, তদন্তে তা দেখছে পুলিশ।

Advertisement

খয়রাশোলের রূপসপুর পঞ্চায়েতের জেমুরটিটা গ্রামের একধারে শেখ শামিরচাঁদের বাড়ি। তবে বিস্ফোরণ যে বাড়িতে হয়েছে, সেটা বসবাসের জন্য তৈরি মূল বাড়ি থেকে বেশ কয়েক মিটার দূরে। ওই ঘরটি ছিল নানা জিনিসপত্র মজুতের জন্য। ধারে পাশে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ইটের গাঁথনির বাড়িটি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণে কেঁপে গিয়েছিল গোটা এলাকাও।

গত বছরের জুন মাসে ওই থানা এলাকার নওপাড়া গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বিস্ফোরণে ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। তার মধ্যেই আরও একটি বিস্ফোরণের পরে উঠে আসছে খয়রাশোলের কয়লা সাম্রাজ্যের দখলদারি নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতের টাকাপয়সা নিয়ে বিবাদের তত্ত্ব। আড়ালে পুলিশের একটা অংশও মানছে সে কথা। তবে যাঁর বাড়িতে বিস্ফোরণ, সেই শেখ শামির চাঁদ ঘটনার পর থেকে পলাতক। এলাকায় সে শাসকদল-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।

Advertisement

তৃণমূল অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিংবা শামিরচাঁদের সঙ্গে শাসকদলের যোগের কথা মানতে চায়নি। জেলা তৃণমূলের অন্যতম নেতা, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সমাজ বিরোধীদের সঙ্গে রাজনীতির কী যোগ থাকতে পারে? কোথাও কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও নেই। এ সব আসলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা।’’

গোটা বিষয়টিকে এত সরলীকরণ করতে রাজি নন এলাকাবাসী এবং তৃণমূলের একটা অংশই। তাঁদেরই একটা অংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, খয়রাশোল দুই বিবাদমান গোষ্ঠীর নেতা অশোক ঘোষ এবং অশোক মুখোপাধ্যায়রা খুনে হয়ে গিয়েছেন বহু আগে। বিরোধ কিন্তু এখনও বর্তমান। যার মূলে রয়েছে খয়রাশোলের কয়লা সাম্রাজের দখলদারি। এখন অবশ্য বিরোধীতার সমীকরণ পাল্টেছে। এক দিকে রয়েছেন নিহত অশোক ঘেষের ভাই দীপক ঘোষ, অন্য দিকে তৃণমূলের খয়রাশোল ব্লক সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও সভানেত্রী অসীমা ধীবর ও মুখোপাধ্যায় অমুগামীরা। ঘটনা হল, রূপসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত শাসকদলের দখলে থাকলেও শক্তি বেশি ঘোষ গোষ্ঠীর।

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, দীপক ঘোষ ঘনিষ্ঠ এক নেতার সমর্থনে ডেমুরটিটা গ্রামে মোরাম ফেলার যে টাকা পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হয়েছিল, তা আত্মসাৎ করেছেন শামির চাঁদ ও তাঁর সাগরেদ পিয়ার মণ্ডল। মাস পাঁচেক আগের সেই অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রামে চূড়ান্ত অশান্তি হয়। গ্রামের লোকেরা শাসকদল আশ্রিত দুই সমাজবিরোধীর বিরুদ্ধে চলে যান। পুলিশের একটা অংশও জানাচ্ছে, এই সুযোগে বিরোধী গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে উঠে। তার জেরে আবার কিছু দিন ঘরছাড়া থাকতে হয়েছিল শামির চাঁদকে। পরে ফিরে এসে সে বাঁচার তাগিদেই বাড়িতে বোমা মজুত করেছিল বলে এলাকাবাসীর কারও কারও দাবি। শামির চাঁদের পরিজনেরা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ওই ঘরে বোমা রাখার কোনও খবর তাঁদের কাছে ছিল না।’’

দীপক ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে নিজেদের মধ্যে বিরোধের কথা স্বীকার করেননি তৃণমূলের খয়রাশোল ব্লক সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকাবাসীর অবশ্য প্রশ্ন, বিরোধ যদি নাই থাকে, তা হলে লোকপুর তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে কেন অনাস্থা আনেন তৃণমূল সদস্যরাই। আবার কিছু দিন আগেও খয়রাশোলের পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী তৃণমূলের অসীমা ধীবরের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন দলেরই সদস্যরা। দিন তিনেক আগে লোকপুরের নওপাড়া মাদ্রাসায় পরিচালন সমিতির নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসরে ছিল তৃণমূলের দু’পক্ষই। এটা কি দ্বন্দ্ব নয়? উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন