জমি নিয়ে বোমাবাজি, তপ্ত রূপপুর

চাষ জমির দখলকে কেন্দ্র করে, ফের তেতে উঠল শান্তিনিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হরিরামপুর। বুধবার সকাল থেকে এলাকায় বোমাবাজি, আদিবাসীদের বাড়িতে ভাঙচুর এবং মারধরের জেরে আতঙ্ক ছড়ায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৯
Share:

বোমাবাজির পরে ঘটনার তদন্তে এলাকায় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

চাষ জমির দখলকে কেন্দ্র করে, ফের তেতে উঠল শান্তিনিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হরিরামপুর।

Advertisement

বুধবার সকাল থেকে এলাকায় বোমাবাজি, আদিবাসীদের বাড়িতে ভাঙচুর এবং মারধরের জেরে আতঙ্ক ছড়ায়। অভিযোগ দুষ্কৃতীদের হামলা এবং ছোঁড়া বোমায় ভেঙেছে স্কুলের বেড়া। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার তুলনামূলক ভাবে কম হলেও, পুলিশ টহলদারির মধ্যেই এ দিন স্কুল চলেছে। এলাকায় বোমাবাজি, অশান্তি ও গণ্ডগোল ছড়ানোর অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করে, পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

শান্তিনিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের বড়বাগান আদবাসী পাড়ায় ঘটনা বুধবার সকালের। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় প্রায় ২২ বিঘে চাষ জমির দখলকে ঘিরে মাস খানেক ধরে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে কলকাতার নিউটাউন এলাকার বাসিন্দা এক মনোরোগ চিকিৎসক এবং তাঁর এক প্রতিবেশীর ঝামেলা চলছে। স্থানীয় আদিবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ওই জমি চাষ করে আসছেন। এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব বেআইনি ভাবে ওই জমি পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ওই চিকিৎসক এবং তাঁর প্রতিবেশীকে।

Advertisement

চলতি বছর ৩০ জুলাই ওই জমির বীজতলা নষ্ট করা, জমিতে চাষ করতে নামা আদিবাসী বাসিন্দাদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল এলাকার তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই মর্মে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। ওই জমিতে যাঁরা চাষ করেন, সেই শ্যাম সরেন, শরৎ হেমব্রম, মাণিক হেমব্রম, শ্যামলী সরেনরা জানান, সকাল নয়টা নাগাদ স্থানীয় তৃণমূল নেতার জনা পঞ্চাশেক লোকজন গ্রামে ঢুকে পড়ে। তারা বোমাবাজি শুরু করে। বাড়িতে ভাঙচুর করে। অভিযোগ, ‘‘শ্যাম সরেনের মেয়ের কানের দুল ছিনতাই করেছে ওই দুষ্কৃতীরা। এমনকী স্কুলের দেওয়ালে বোমা মেরেছে। স্কুলের বেড়া ভেঙেছে।’’

এ দিন গ্রামের একাধিক বাড়িতে ভাঙচুরের ছবি সহ গ্রামের রাস্তায় ও স্কুলের দেওয়ালে বোমার দাগ স্পষ্ট রয়েছে। গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের বেড়া ভাঙা। শ্যাম সরেন জানান, তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর হয়েছে। ধানের গোলা নষ্ট করা হয়েছে। বাড়তি গণ্ডগোলের আশঙ্কায়, বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষের নির্দেশে পুলিশ রয়েছে গ্রামে। দক্ষিণ হরিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়দেব পাল বলেন, ‘‘বিদ্যালয় সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয়। মোট ৬৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে উপস্থিতির হার ৫২ থেকে ৫৫ থাকে। কিন্তু এ দিন ২৫ জন উপস্থিত হয়েছে। গ্রামে ঝামেলার কারণে অর্ধেক পড়ুয়া আসেনি। তবে পুলিশ রয়েছে, ক্লাস করাতে কোনও সমস্যা হয়নি।’’

কলকাতার নিউটাউন এলাকার বাসিন্দা ওই মনোরোগ চিকিৎসক কেদার রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কেদারবাবুর দাবি, ‘‘১৯৪২ সালের পরে থেকে জমিজমা সংক্রান্ত যা কাগজপত্র আছে আমরা তা দিয়েছি। আমাদের জমি জোর করে দখল করার জন্য কে বা কারা আদিবাসীদের উস্কিয়েছে জানি না। তাঁদের ভয়ে আমরাই জমিতে চাষ করতে পারছি না। আমি কেন লোক পাঠাবো।’’

একই ভাবে তৃণমূল এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলের রুপপুর অঞ্চল সভাপতি কাজী নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং আমার অনুগামীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং আমি সকলকে বলেছিলাম জমিজমা সংক্রান্ত প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের কমিটির কাছে গিয়ে কথা বলার জন্য।’’

আদিবাসী গাঁওতার বোলপুর ব্লক সভাপতি শুকল মাড্ডির দাবি, ‘‘আদিবাসীদের জমি বেআইনি ভাবে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আগেই করেছি। পাঁচ সদস্যের কমিটির কাছে গিয়েছিলাম। বর্ষা চলে যাচ্ছে দেখে মঙ্গলবার ওই জমিতে ধান পোঁতা হয়। তার পরেই ওরা ঝামেলা করেছে। বিষয়টি বিচারাধীন। আদালত যে নির্দেশ দেবে সেটাই আমরা মেনে নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন