দিনে দুপুরে ষাঁড়ের লড়াই, ডাক পড়ল দমকলের

পুরশহরের বাসিন্দা ওরাও। পুরসভার সামনে নিত্য যাওয়া আসা। এমনিতে শান্তশিষ্ট। কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিনেই কী যে হল, দু’জনে রীতিমতো শুম্ভ নিশুম্ভের লড়াই বাধিয়ে বসল। খবর গেল দমকলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৩
Share:

গুঁতো: সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া পুরসভার সামনে। নিজস্ব চিত্র

পুরশহরের বাসিন্দা ওরাও। পুরসভার সামনে নিত্য যাওয়া আসা। এমনিতে শান্তশিষ্ট। কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিনেই কী যে হল, দু’জনে রীতিমতো শুম্ভ নিশুম্ভের লড়াই বাধিয়ে বসল। খবর গেল দমকলে।

Advertisement

হ্যাঁ! দমকল। কেন না, যুযুধান দুই পক্ষই চতুষ্পদ। তারা পুরসভা চত্বরের চেনা দুই ষাঁড়। একটির গায়ের রঙ সাদা, অন্যটির বাদামি। নির্বিবাদী বলে তাদের নিয়ে বিশেষ গল্পকথা নেই। নামও দেয়নি কেউ।

সোমবার দুপুর তখন দেড়টা। পুরসভার একদিকে সাহেববাঁধ রোড, অন্যদিকে রেড ক্রস রোড। দুই রাস্তাকে জুড়ে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে পুরচত্বরের মধ্যে দিয়ে। সেখানেই লড়াই বেধে গেল দুই ষাঁড়ের। মাথায় মাথা ঠেকিয়ে ভীষণ গুঁতোগুঁতি। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে চলেছে সেই লড়াই। দেখতে চতুর্দিকে ভিড় জমে যায়। পুরসভার দোতলার বারান্দা থেকে অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে লড়াই দেখেন।

Advertisement

এ দিকে যাঁরা ছিলেন নীচে, তাঁরা পড়েন বিপাকে। পুরসভার সামনে ভেজা ছোলা আর ফল বিক্রি করেন কালী রায়। পসরা ফেলে পড়িমড়ি করে দৌড় দেন তিনি। বেশ খানিকটা গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বলেন, ‘‘আগে নিজে বাঁচলে তার পরে অন্য জিনিসপত্র।’’ চায়ের দোকান ফেলে পালান দোকানি। খদ্দেরদের অবস্থাও তথৈবচ।

মুমতাজ বেগম, পার্থ গুপ্তদের মতো বিভিন্ন কাজে যাঁরা পুরসভায় এসেছিলেন তাঁরা পড়েন বিপাকে। অনেকে মোটরবাইক বা সাইকেল রেখে কাজে গিয়েছিলেন। যুযুধান দুই ষাঁড়কে পেরিয়ে বাহন উদ্ধার করার দুঃসাহস হয়নি তাঁদের। এ দিকে ধুপ ধাপ করে দুই ষাঁড়ের ধাক্কাধাক্কিতে পড়তে থাকে দাঁড় করিয়ে রা খা মোটরবাইক। ব্যাক ভিউ মিরর, হেডলাইট ভেঙে খানখান হয়ে যায়। তবে এই সমস্ত কিছুর মধ্যে মোবাইলের ক্যামেরা তাক করেছিলেন কিছু অত্যুৎসাহী দর্শক।

বেগতিক বুঝে সটান দমকলে ফোন করেন পুরসভার কাউন্সিলর বিভাস দাস। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের লড়াই বাধলে না হলে পুলিশে খবর দেওয়া যায়। ষাঁড়ের লড়াই বাধলে কী করা যেতে পারে সেই ভাবনা স্বপ্নেও আসেনি কখনও। ভাবলাম যাবতীয় আপদকালীন পরিস্থিতিতে তো দমকলই ভরসা। তাই ফোন করলাম।’’

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘণ্টা বাজিয়ে গাড়িয়ে নিয়ে চলে আসেন দমকল কর্মীরা। তবে ততক্ষণে লড়াই থেমেছে। বাদামি ষাঁড়টি একটি শিঙ ভেঙে পিছু হটেছে। সাদা ষাঁড়টি গ্যাঁট হয়ে বসেছে। এত ক্ষণ ধরে তার প্রতাপ দেখে তখনও তার ধারে কাছে ঘেঁষছে না কেউই। লড়াই থেমেছে শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে গেটের বাইরে থেকেই ফিরে যান দমকল কর্মীরা। উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘দমকলও নিশ্চই এতদিন ভেবে দেখেনি, ষাঁড়ের লড়াই কী ভাবে থামানো যেতে পারে!’’

পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘এমনিতে ষাঁড়গুলো শান্তই। আজ হঠাৎ কী হল কে জানে। নিজেরাই শেষ পর্যন্ত লড়াই থামিয়েছে, এটাই রক্ষে।’’

তবে লড়াই থামতে সরস মন্তব্য ভেসে বেড়িয়েছে পুরচত্বরের বাতাসে। অনেকেই বলেছেন, ‘‘পুরসভায় ঘোরাফেরা করতে করতে মাথা বিগড়ে গিয়েছিল ষাঁড় দু’টোর। কুর্সি নিয়ে লড়াই দেখতে দেখতে বোধ হয় শিঙ-মকসো করার সাধ হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন