Dhanteras

ধনতেরস উপলক্ষে বাজার জমার আশা

তবে ক্ষুদ্র স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, বাজার মন্দা থাকার পিছনে আরও একটা কারণ বড় দোকানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকা। হুটহাট দাম কমা-বাড়া করা তো আছেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০৩:১২
Share:

বাছাই: ধনতেরসের কেনাকাটা। সিউড়িতে। বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

করোনা রুখতে লকডাউনের জন্য পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়ায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল দোকান। স্বর্ণ ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা, সকলেই তাকিয়ে ছিলেন ধনতেরসের দিকে। মাঝে সোনার দাম অসম্ভব বেড়ে যাওয়ায় ভাঁজ পড়েছিল উভয়ের কপালেই। তবে দিন তিনেক হল সেই দর বেশ খানিকটা কমে যাওয়ায় গয়নার বাজার চাঙ্গা হবে বলেই আশা বীরভূমের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

জেলার প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং কলকাতার বিভিন্ন স্বর্ণ বিপণির ফ্রাঞ্চিইজিরা জানালেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার ধনতেরস। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই গয়না কেনাকাটা শুরু হয়েছে। আশা ভাল ব্যবসা হবে। তবে ক্ষুদ্র অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা আশাবাদী নন। তাঁদের একাংশের আশঙ্কা, অন্যবারের তুলনায় অর্ধেক ব্যবসাও হবে না। কারণ, মানুষের হাতে টাকাই তো নেই।

কলকাতার একটি স্বর্ণ বিপণির হয়ে সিউড়ি ও দুবরাজপুরে দুটি শাখা চালান মুজিবর রহমান। তিনি বলছেন, ‘‘বাজার মোটের উপর বেশ ভাল। ধনতেরস তো আছেই, পুজোর পর থেকেই বাজার জমে। এবারেও তেমন ইঙ্গিত রয়েছে। তবে গত সপ্তাহে অলঙ্কার তৈরির সোনার দাম ৫৬ হাজার ছুঁয়ে গিয়েছিল বলে একটু চিন্তায় ছিলাম। বুধবারে সেই দাম পঞ্চাশ হাজারের নীচে রয়েছে। ক্রেতারা খুশি।’’

Advertisement

তার প্রমাণ মিলেছে সিউড়ির একটি স্বর্ণ বিপণিতে। মেয়ে অস্মিতার বিয়ের জন্য এ দিন সেখানে গয়না কিনছিলেন সিউড়ির বধূ স্বাতী রায়। জানালেন, ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে। গয়না কিনতেই হবে। ধনতেরসের সময়টাই বাছলাম। এ দিনই দুবরাজপুরে নিজের জন্য সোনার পলা বাঁধা কিনছিলেন সিউড়ির কড়িধ্যার গৃহবধূ পূর্ণিমা দাস। বললেন, ‘‘দাম কিছুটা কম। শখ ছিল তাই চলে এলাম এই সময়টায়।’’

এ বার সোনার দাম গতবারের তুলনায় প্রায় ১১ হাজার টাকা প্রতি ১০ গ্রামে বেশি। তবু ধনতেরসকে ঘিরে যথেষ্ট ভাল কেনাকাটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলকাতার এক গয়না বিপণির বোলপুর ও রামপুরহাট শাখার দুই ফ্রাঞ্চাইজি মণীষ খাণ্ডেলওয়াল এবং ববি সিঙ্ঘানিয়া। তাঁরা বলছেন, ‘‘এ বার বরং আগে অনেকেই গয়না পছন্দ করে বুক করে যাচ্ছেন।’’ বোলপুরের বধূ গার্গী দত্ত জানালেন, তিনি তেমনটাই করেছেন। শুক্রবার পছন্দ করা গয়না বাড়ি নিয়ে যাবেন।

ফ্রাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে সহমত নন, রামপুহাটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী তথা অখিলবঙ্গ স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির রামপুরহাট শাখার সম্পাদক তুষার কর্মকার। তুষারবাবু বলছেন, ‘‘বাজার সেই মার্চ থেকে খারাপ। লকডাউনের জেরে স্বর্ণশিল্পীরা অনেকেই ভিন্ন পেশায় চলে গিয়েছেন। এ দিকে মানুষের হাতে টাকা নেই। এত দাম গিয়ে গয়না কী করে কিনবেন মানুষ। ধানও তো ওঠেনি।’’ রামপুরহাটের নবগ্রামের বধূ মৌলি মণ্ডল জানালেন, সোনা দিয়ে শাঁখা বাঁধানোর শখ ছিল। দাম শুনে পিছিয়ে এসেছেন।

কীর্ণাহারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী কার্তিকচন্দ্র পাল, লাভপুরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রহুল সরকার বলছেন, ‘‘গত বছর এই সময়টায় অনেক অর্ডার পেয়েছিলাম। এবার এখনও বায়না হয়নি।’’ অমোদপুরের বধূ বর্ণালী রুজ, নানুরের বধূ মধুমিতা পালদের বক্তব্য, অন্যবার কিছু না কিছু কেনেন। এ বার পারিবারিক ব্যবসার মন্দা থাকায় অলঙ্কার কিনতে পারবেন না।

তবে ক্ষুদ্র স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, বাজার মন্দা থাকার পিছনে আরও একটা কারণ বড় দোকানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকা। হুটহাট দাম কমা-বাড়া করা তো আছেই। দ্বিতীয়ত, বড় গয়না বিপণিতে গেলে ক্রেতাদের পছন্দের অনেক বিকল্প খোলা থাকে। অখিলবঙ্গ স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সিউড়ি শাখার সম্পাদক তরুণ সেন ততটা হতাশ নন। তিনি বলছেন, ‘‘প্রতিযোগিতা থাকুক। দাম চড়া থাকুক। কিন্তু, এত দিন ধরে মন্দা চলার পরে ধনতেরসে কেনা কাটা হবে। সেটা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন