শক্তি কি বেড়েছে, পরীক্ষায় বামেরা

গত বিধানসভা ভোট থেকেই বাঁকুড়া জেলায় ভোট ফলাফলে এক চেটিয়া সাফল্য ধরে রেখেছে তৃণমূল। মাঝখানে পার হয়েছে পঞ্চায়েত, লোকসভা ও পুরভোট। ফের বিধানসভার প্রহর গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০৪
Share:

গত বিধানসভা ভোট থেকেই বাঁকুড়া জেলায় ভোট ফলাফলে এক চেটিয়া সাফল্য ধরে রেখেছে তৃণমূল। মাঝখানে পার হয়েছে পঞ্চায়েত, লোকসভা ও পুরভোট। ফের বিধানসভার প্রহর গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে আজ শনিবার আপাত দৃষ্টিতে ‘ছোট পরিসর’-এর ভোট হলেও বাঁকুড়ার পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির উপনির্বাচনগুলিকে কোনও ভাবেই খাটো করে দেখতে নারাজ শাসক-বিরোধী কেউই।

Advertisement

জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ১৯টি ও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। যার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের ছ’টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই শাসক দলের পকেটে চলে গিয়েছে। একটি আসনে আদালতের আপত্তিতে ভোট হচ্ছে না। বাকি ১৪টি আসনে জনতা কার পক্ষে রায় দেয় তাই দেখতে মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলি। সম্প্রতি নবান্ন ও বৃহস্পতিবার লালবাজার অভিযানে জমাটি ভিড় নিয়ে গিয়ে পুলিশের লাঠির ঘা’ খাওয়ায় বাম তথা সিপিএম নেতৃত্বের মধ্যে খানিকটা লড়াকু মানসিকতা ফিরে এসেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। জেলা স্তরেও চালচলন বদলেছে বহু বাম নেতানেত্রীর। এরই মাঝে কয়েক সপ্তাহ আগে পুরুলিয়ার পাড়া ও বাঁকুড়ার লালবাজার মোড়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায় মানুষের ঢলও দলকে বাড়তি শক্তি জুগিয়েছে বলে দাবি বাম নেতাদের। তবে জেলার এক বর্ষীয়ান বাম নেতার মন্তব্য, ‘‘শক্তি কিছু বাড়ল কি না, তার কিছুটা টের পাওয়া যাবে এই উপনির্বাচনগুলোর ফলাফলে। তাই বিধানসভা ভোটের আগে এই ভোটের গুরুত্ব রয়েছে।’’

যদিও এই ঘটনার পরেও ছ’টি আসনে বিরোধীরা প্রার্থী না দিতে পারায় বিনা বাধায় তৃণমূলের জয় ও ভোট হতে চলেছে এমন দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনেও বামেরা প্রার্থী দিতে না পারায় প্রশ্ন উঠছেই। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি অবশ্য অন্যান্যবারের মতো এ বারেও প্রার্থী না দিতে পারার জন্য ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস’কেই দায়ী করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ইন্দাসের রোল ও শাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, ওন্দার লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েত, পাত্রসায়রের বালসি ১ ও কোতুলপুরের লেগো ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং রাইপুরের ফুলকুসমা গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি করে আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়ে, বাম কর্মীদের হুমকি দিয়ে, দলীয় কার্যালয় তালাবন্ধ করে, ব্লক অফিসে জমায়েত করে কোথাও বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেয়নি।’’ কেঞ্জাকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬ ও সোনামুখীর মানিকবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর আসনেও কেন বামেরা প্রার্থী দিতে পারল না? অজিতবাবুর দাবি, কেঞ্জাকুড়ায় তাঁদের প্রার্থীকে ‘হাইজ্যাক’ করে প্রধান বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে তৃণমূল টিকিট দিয়েছে। অন্যদিকে মানিকবাজারে প্রার্থীকে হুমকি দিয়ে মনোনয়ন পেশ করতে দেয়নি শাসক দলের নেতারা।

Advertisement

উল্লেখ্য, কেঞ্জাকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ও মানিকবাজারে তৃণমূলের সঙ্গে লড়ছে নির্দল। গ্রামবাসীদের অনেকে যাঁকে শাসক দলেরই বিক্ষুব্ধ বলে দাবি করছেন। অজিতবাবু বলেন, “আমরা উপনির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছিলাম। বিধানসভার আগে মানুষের মনের একটা আভাস এই ভোটে মিলত। কিন্তু তৃণমূল যে ভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাতে কোথাও ভোটারেরা মন খুলে মতদান করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।” যদিও এই পরিস্থিতিতেও কয়েকটি আসনে সিপিএম এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অন্যদিকে বিজেপিও শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে।

কেঞ্জাকুড়ার যে আসনে অজিতবাবু সিপিএম প্রার্থীকে হাইজ্যাক করে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড় করানোর অভিযোগ তুলেছেন, সেখানে বিজেপি প্রার্থীকেও ‘কিডন্যাপ’ করার চক্রান্ত কষা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলছেন বিজেপির জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটক। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলের লোকজন আমাদের প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করানোর ফন্দি এঁটেছিল। কিন্তু আমরা প্রার্থীকে লুকিয়ে রেখেছিলাম বলে পারেনি”। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “গ্রামাঞ্চলের উপযুক্ত উপভোক্তারা সরকারি সুবিধা পাননি। আমরা প্রচারে সেই দিকটি তুলে ধরেছি। ভোটের দিন সন্ত্রাস না হলে জেলায় ভাল ফল নিয়ে আমি নিশ্চিত।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ অবশ্য জেলায় বিরোধী দলগুলির সংগঠন নেই বলে দাবি করে সব ক’টি আসনেই তাঁদের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “সংগঠন নেই, প্রার্থীই খুঁজে পায় না এই জেলার বিরোধী দলগুলি। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে তাই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। অক্ষমতা ঢাকতে অজুহাত না দিয়ে বরং সংগঠন গড়ায় মন দিক ওঁরা।” দলের কোনও বিক্ষুব্ধ নির্দল দাঁড়িয়েছেন বলেও মানতে নারাজ তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন