রূপপুর পঞ্চায়েতের বড়ডাঙা গ্রামে ডাইনি অপবাদে আদিবাসী বধূকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ মহিলাকে গ্রেফতার করল শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের বোলপুর আদালতে তোলা হলে তাঁদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সৌরভ নন্দী বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী ফিরোজ কুমার পাল।
বড়ডাঙা গ্রামের বাসিন্দা, নির্যাতিত বধূটির পরিবারের এক সদস্য দিন দশেক আগে সর্পদংশনে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই পরিবারের লোকেরা নানা কুকথা বলত বছর পঞ্চান্নর ওই বধূকে। অভিযোগ, দেওর-ভাসুরের পরিবারের লোকজন বেশ কয়েকবার ওই বধূকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে দেওর ও ভাসুরের বাড়ির লোকেরা চড়াও হয় ওই বধূর উপরে। মারধরের চোটে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বোলপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই আদিবাসী বধূ।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই, এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত। রূপপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রণেন্দ্রনাথ সরকার জানান, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার দু’দিনই এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সচেতন করার চেষ্টা করেছে পঞ্চায়েত। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য ওই আদিবাসীদের একাংশকে সতর্কও করা হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফে।
এমনিতে রূপপুর যথেষ্ট বড় পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েত এলাকায় প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ২১টি। দু’টি জুনিয়র হাইস্কুল, একটা মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, ৫টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, একটা গার্লস হাইস্কুল, তিনটে বয়েজ হাইস্কুল এবং ৪২ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাশাপাশি আছে চারটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বোলপুর শহরের গা ঘেঁষা এক পঞ্চায়েতে সতেচনতার এমন হাল কেন হবে? খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, ওই পঞ্চায়েতের একাধিক আদিবাসী মহল্লায় সেই অর্থে শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি। ওই সমাজের একাংশের মধ্যে সচেতনতার অভাবে কুপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস এমনই শিকর গেড়েছে যে, তার শিকার হচ্ছেন একাধিক নিরপরাধ আদিবাসী।
বস্তুত, বড়ডাঙ্গা গ্রামের ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং তা উস্কে দিয়েছে, রূপপুর পঞ্চায়েতেরই অন্য এক সংসদের ঘটনার স্মৃতি। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের অগস্টে এই পঞ্চায়েতের বিনোদপুর গ্রামে ডাইনি অপবাদেই দুই আদিবাসী পরিবারকে আক্রমণ করেন গ্রামবাসীদের একাংশ। নবম শ্রেণির এক ছাত্রী-সহ আহত হন চার মহিলা। মারধরের জেরে ষাটোর্ধ্ব সোনামণি হেমব্রম পরে হাসপাতালে মারা যান। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন কার্যত ‘একঘর’ করে রেখেছিল ওই দুই আদিবাসী পরিবারকে। ওই ঘটনায় হইচই শুরু হওয়ায় গ্রামে আসে রাজ্য মহিলা কমিশন। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে মাঠে নামে। ওই বছরই ২৬ সেপ্টেম্বর, শান্তিনিকেতন থানার কঙ্কালিতলা পঞ্চায়েতের ধূলটিকুরি গ্রামে এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদে মাটিতে ফেলে পেটায় স্থানীয় বাসিন্দারা। বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ওই মহিলার স্বামী এবং প্রতিবেশীও।
এমন ঘটনা বাড়তে দেখে নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। তাদের উদ্যোগে বিশ্বভারতী এবং আদিবাসী সমাজের একাংশকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়ে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর। ওই মাসেরই ১৯ তারিখ গঠিত হয়েছে একটি কমিটিও। নিয়ম মেনে ওই কমিটি এলাকার আদিবাসী সমাজের মোড়লদের নিয়ে বৈঠক করার পাশাপাশি বোলপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে গিয়ে সচেতনতার কর্মসূচি নিয়েছে।
তার পরেও পরিস্থিতির যে খুব বেশি বদল ঘটেনি, তা এ বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বড়ডাঙা। আজ, শনিবার বড়ডাঙ্গায় তাই হতে চলেছে সচেতনতা শিবির। কিন্তু, তাতে কুসংস্কারের শিকড় ওপড়ানো যাবে কি, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
জঞ্জালে ক্ষোভ। নলহাটি শহরে যত্রতত্র জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। এর ফলে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জঞ্জাল ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকার ফলেই এমনটা হচ্ছে।