সিসি ক্যামেরার নজরে শিবপুর

ভাঙড় থেকে শিক্ষা নিয়ে, শিবপুরে বাড়তি গণ্ডগোল এড়াতে এ বার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি অন্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

শিবপুর মৌজার এমনভাবেই নানা জায়গায় লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙড় থেকে শিক্ষা নিয়ে, শিবপুরে বাড়তি গণ্ডগোল এড়াতে এ বার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে জেলা পুলিশ।

Advertisement

জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি অন্য। জেলা পুলিশের এক কর্তা বুধবার বলেন, “শুধু শিবপুর মৌজাই নয়। গোটা বোলপুর শহর এবং সংলগ্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসবে। দুর্ঘটনা, নানা অপরাধের ওপর নজর রাখতে এমন ব্যবস্থা আগেই নেওয়া হয়েছে।” বোলপুরের রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান প্রীতিকণা দাস বলেন, “জেলা পুলিশের পক্ষে সুপুর মিনিবাজার এলাকায় তিনটি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, নানা অপরাধ, দুর্ঘটনা-সহ একাধিক বিষয়ে নজরদারি চালানোর জন্য জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ স্বাগত যোগ্য।

বাম জমানায় ২০০০ সালে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় প্রায় তিনশো একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। অভিযোগ, সেই সময়ে বিঘে পিছু ৬৮ হাজার ধার্য হলেও, ৪৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে পালা বদলের পরে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তৎকালীন বিরোধী তথা বর্তমানের ক্ষমতাসীন তৃনমূলের দাবি মোতাবেক, ওই অধিগৃহীত এলাকায় শিল্প, কর্মসংস্থান ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে জমিদাতা, কৃষক এবং বর্গাদারদের একাংশ আন্দোলনে নামেন। প্রকল্প এলাকার সীমানা প্রাচীর ভেঙে, কাজ বন্ধ করে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে মাঠে নামে কংগ্রেস ও বিজেপি। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে সিপিএমও। অবস্থা বেগতিক বুঝে, দেড় দশকের পূর্ব নির্ধারিত বকেয়া বিঘে পিছু ২০ হাজার টাকা দেওয়াও শুরু করেছে সরকার। আর তাই ওই এলাকায় যাতে কোনও বাড়তি গণ্ডগোল না হয় তার জন্য উদ্যোগী জেলা পুলিশ।

Advertisement

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ভাঙড়ের জমি আন্দোলনে স্থানীয়দের পাশাপাশি বহিরাগতদের উপস্থিতি আন্দোলনকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে নিয়ে গিয়েছে। শিবপুরে যাতে ওই ধরনের কিছু না হয়, তার জন্য আগেভাগেই তৎপর। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, ভাঙড় কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে কার্যত বহিরাগত আটকাতে এবং ওই এলাকায় আনাগোনার ওপর নজরদারি করতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে গোটা এলাকা মুড়িয়ে ফেলেছে জেলা পুলিশ।

অধিগৃহীত এলাকাকে ঘিরে মোট ১২টি সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে জেলা পুলিশ। বোলপুরের বাইপাস রাস্তা ধরে অধিগৃহীত এলাকায় যাওয়ার পথে কাশীপুর গ্রামের দিকে দুটি রয়েছে। লাগোয়া মোড় তথা কাশীপুর বাসস্টপ এলাকার তিন দিকে তিনটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এক দিকে বোলপুর, এক দিকে শিবপুর এবং অন্যদিকে নুরপুর, সুপুর যাওয়ার পথে রয়েছে ওই তিনটি সিসি ক্যামেরা। প্রকল্প এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়া এনএইচটুবি রাস্তার শিবতলা মোড়ে বসেছে চারটি ক্যামেরা। এক দিকে ইলামবাজার বাইপাস উল্টো দিকে বোলপুর এবং এক দিকে শ্রীনিকেতন এবং উল্টো দিকে সুপুর মিনিবাজারে রয়েছে ওই চার ক্যামেরা। একই ভাবে সুপুর মিনিবাজারে বসেছে তিনটি ক্যামেরা।

ওই প্রকল্প এলাকায় আসাযাওয়ার পথের মোড়ে মোট ১২টি ক্যামেরা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মনিশ রায়, সোরমান মণ্ডল, সামসুনেহা বিবিরা জানান, বিশৃঙ্খলা এড়ানোর পাশাপাশি কড়া নজরদারি চালাতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) ক্যামেরায় বসিয়েছে জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের লোকজন মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার পর্যন্ত, দফায় দফায় ওই এলাকায় মোট ১২টি সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে। অন্যদিকে ওই প্রকল্প এলাকায় তৃণমূলের কৃষক সমাবেশ রয়েছে শনিবার। যেখানে আসার কথা দলের নেতা সুব্রত বক্সি, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। দিন কয়েক আগে ওই প্রকল্প এলাকা ঘুরে, দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এমনটাই জানিয়েছিলেন। বিরোধীদের দাবি, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে জেলা পুলিশ। আর তাই তৃণমূলের সভার আগে সিসি ক্যামেরা দিয়ে মুড়িয়ে ফেলেছে। নজরদারিও হবে আবার শাসক দলের সভাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাও জুগিয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন