ধৃত: বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া আদালতে অভিযুক্ত সনাতন। নিজস্ব চিত্র
সুচ-কাণ্ডে শিশুকন্যা মৃত্যুর মামলায় চার্জ গঠন হল। পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার নদিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা মামলার মূল দুই অভিযুক্ত সনাতন ঠাকুর ও তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার বিশেষ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সুযশা মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার চার্জ গঠন হয়।
গত ১১ জুলাই জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুকন্যাকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা করতে গিয়ে শিশুটির শরীরের একাধিক স্থানে অস্বাভাবিক ক্ষতচিহ্ন দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। শিশুর মায়ের কাছে এ নিয়ে সদুত্তর না পেয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন। এক্স-রে করতে ধরা পড়ে শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সাতটি সুচ ফুটে রয়েছে। তা বের করতে অবিলম্বে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে চাইল্ডলাইন পুলিশের কাছে শিশু নির্যাতনের একটি মামলা রুজু করে।
১৪ জুলাই সন্ধ্যায় পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। শিশুটির অস্ত্রোপচার জটিল বলে পরের দিনই তাকে কলকাতার এসএসকেএমে পাঠানো হয়। তিন দিন পর্যবেক্ষণে রেখে ১৮ জুলাই এই হাসপাতালেই শিশুটির অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু চিকিতসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ২১ জুলাই শিশুটির মৃত্যু হয়। পরের দিন জিজ্ঞাসাবাদের পরে শিশুটির মাকে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করে।
যদিও তদন্তে ততদিনে পুলিশ জেনে গিয়েছিল, ঘটনার মূল অভিযুক্ত শিশুটির সৎবাবা সনাতন। তার হদিস পুলিশ পাচ্ছিল না। পুলিশ তার খোঁজে হন্যে হয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা চষে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে গত ২৯ জুলাই উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র জেলার পিপিড় থানা এলাকার রেণুকোটের একটি হনুমান মন্দির থেকে ছদ্মবেশে সনাতনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদের পরে মামলার তদন্তকারী অফিসার গোপাল মান গত ১২ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রায় সাড়ে পাঁচশো পাতার চার্জশিট পেশ করেন। মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী পার্থসারথি রায় জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীর আর্জি মেনে শুনানির পরেই এ দিন এই মামলার চার্জ
গঠন হয়েছে।
আদতে এই মামলার চার্জ গঠনের দিন নির্ধারিত হয়েছিল গত ২৪ অক্টোবর। কিন্তু অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী আদালতে আর্জি জানান, শুনানির মাধ্যমে যাতে চার্জ গঠন করা হয়। সেই আর্জি মেনেই বিচারক এ দিন শুনানি শেষে চার্জ গঠন করার অনুমতি দিয়েছেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত। পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ ও কলকাতার এসএসকেএমের চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজন এই মামলায় সাক্ষ্যদান করবেন।’’
তিনি জানান, দু’জনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারা অর্থাৎ হত্যা, ১২০ (বি) অর্থাৎ ষড়যন্ত্র ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সনাতনের বিরুদ্ধে ৩৭৬ এবং পকসো ৬ ধারায় চার্জ গঠন হয়েছে। শিশুটির মায়ের বিরুদ্ধে ২০১ পকসো ১৮ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় আনোয়ার আলি আনসারি নামে আরেকজন সরকারি আইনজীবী বিশেষ সরকারি আইনজীবী হিসেবে যুক্ত থাকবেন।
এ দিনও যথারীতি কড়া পুলিশি প্রহরায় সনাতন ও তাঁর দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রীকে আদালতে হাজির করানো হয়। তবে সনাতন ছিল একেবারেই খোসমেজাজে। প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে নিজের মনেই গানের সুর ভাঁজছিল।