ইঞ্জেকশনের পরেই শিশুর মৃত্যু, বিক্ষোভ হাসপাতালে

জ্বরে ভোগা শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে আস্তে আস্তে সেরেও উঠেছিল সে। হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে আর বাড়ি ফেরা হল না বছর দেড়েকের গোবিন্দর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৭
Share:

দেহ রেখে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের সুপারের ঘরে বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র

জ্বরে ভোগা শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে আস্তে আস্তে সেরেও উঠেছিল সে। হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে আর বাড়ি ফেরা হল না বছর দেড়েকের গোবিন্দর। অভিযোগ, একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই শিশুটি মারা যায়।

Advertisement

শুক্রবার এই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে। মৃত শিশুর দেহ হাসপাতাল সুপারের টেবিলে ফেলে রেখে ঘণ্টা খানেক ধরে বিক্ষোভ দেখান ওই শিশুর আত্মীয়েরা। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের দফতরে ঢুকে কর্মীদের হেনস্থা করা ও টেবিলের কাচ তুলে কর্মীদের দিকে বিক্ষোভকারীরা মারতে যান বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বিক্ষোভ থামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সর্দি-জ্বর নিয়ে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি হয় ওন্দার নাকাইজুড়ির ভগবানবাটির বছর দেড়েকের শিশু গোবিন্দ লায়েক। হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে শারীরিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছিল তার। গোবিন্দর বাবা শ্রীকান্ত লায়েক জানান, তাঁর ছেলে সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। এ দিনই তাকে ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন সকালে হাসপাতাল থেকে গোবিন্দকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। সেই ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরেই ছেলে ঝিমিয়ে পড়ে। অল্পক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হয় তার।’’ এই ঘটনার পরেই ক্ষোভ ছড়ায় মৃত শিশুর পরিবারের লোকজদের মধ্যে। ভগবানবাটি গ্রাম থেকে আরও লোকজন এসে হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে বিক্ষোভ থামে।

Advertisement

শ্রীকান্তবাবু হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত ভাবে ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চান। শ্রীকান্তবাবুর কথায়, “ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়া, অথবা ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ছাড়া সুস্থ হয়ে ওঠা আমার ছেলে মারা যেতে পারে না। অসুস্থ অবস্থায় যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল তখন কিছু হয়ে গেলে তাও মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু চোখের সামনে সুস্থ ছেলেটাকে মরতে দেখলাম। এটা মানতে পারছি না।” গোবিন্দর মা মণিমালাদেবী এই ঘটনায় শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। তিনিও ছেলের মৃত্যুর জন্য গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ দিন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন শ্রীকান্তবাবুর পড়শি রাজীব গোস্বামী। তাঁর কথায়, “এর যথাযথ তদন্ত চাই। ডাক্তার বা নার্সদের গাফিলতি ধরা পড়লে কড়া শাস্তি হবে।’’

জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রায় সেরে ওঠা শিশুটি ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরে কেন মারা গেল তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না হাসপাতালের কর্তারাও। হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ভর্তি হওয়ার দিন থেকেই যে ইঞ্জেকশনটি গোবিন্দকে দেওয়া হচ্ছিল, এ দিনও সেই একই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। গত কয়েকদিন ধরে ওই ইঞ্জেকশন নিয়ে শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল। অথচ কী হল, তার ব্যাখ্যা নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও। ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে যে অভিযোগ উঠছে তা নিয়েও হাসপাতালের কর্তারা মুখ খুলতে চাননি।

হাসপাতালের তরফে দাবি করা হচ্ছে, রাতে গোবিন্দর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। ডাক্তারও ডাকতে হয়েছে। যদিও গোবিন্দর মায়ের দাবি, “ছেলের পেটে ফেঁপে ছিল। নার্সদের তা জানানো হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তার আসেননি।” হাসপাতাল সুপার পৃথ্বীশ আকুলি বলেন, “চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না তা বিভাগীয় তদন্তের পরেই জানা যাবে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ঘটনার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন