উদ্বিগ্ন জেলা চাইল্ড লাইন সাত বিয়ে রুখেও খেদ

২৪ ঘণ্টায় সাত! গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত সাত-সাতটা নাবালিকা বিয়ে রুখে দিল চাইল্ড লাইন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৮:০৬
Share:

বাল্যবিবাহ বিরোধী সচেতনতা বাড়াতে খুদেদের নাটক। —ফাইল চিত্র।

২৪ ঘণ্টায় সাত!

Advertisement

গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত সাত-সাতটা নাবালিকা বিয়ে রুখে দিল চাইল্ড লাইন।

সবকটি বিয়ে আটকানো গেলেও চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর দেবাশিস ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘এখনও ৯০ শতাংশ খবরই আমরা পাই না।’’ প্রশাসনের কর্তারাও মানছেন, যে হারে জেলায় বাল্যবিবাহ হয় তার একটা শতাংশ মাত্র প্রশাসনের নজরে আসে। দ্বিতীয়ত প্রাথমিক ভাবে আটকানো গেলেও অনেক নাবালিকারই বিয়ে হয়ে যায়। কখনও কখনও খবর পাওয়া সত্বেও বিয়ে আটাকাতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। দিন কয়েক আগেই ময়ূরেশ্বরের একটি ঘটনা থেকে মিলছে তেমন নজিরই!

Advertisement

চাইল্ড লাইন-এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলছে, জেলায় বাইশো গ্রাম সংসদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি জায়গায় কোনও চাইল্ড প্রটেকশন কমিটি নেই। সেই কারণে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তার খবরই এসে পৌঁছয় না সব সময়।

মঙ্গলবার প্রথম ঘটনাটি লাভপুর থানা এলাকার। ঘড়িতে প্রায় ন’টা বাজতে চলল। বিয়েবাড়িতে ভিড়, বড় যাত্রীরা প্রায় এল বলে। তখনই জনৈক এক বাসিন্দা হেল্পলাইন নম্বরে চাইল্ডলাইনকে খবর দেয় এক নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে। খবর পৌঁছয় ব্লক প্রশাসন ও পুলিশেও। মিলিত প্রচেষ্টায় রাস্তাতেই আটকে দেওয়া হয় বরযাত্রীকে। রুখে দেওয়া হয় বিয়ে। যে নাবালিকার বিয়ে হতে যাচ্ছিল, স্কুলের খাতায় তার বয়স মাত্র বারো!

‘‘অন্যায় হয়েছে। ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেব না।’’— পুলিশ ও চাইল্ড লাইনকে এমনই একটি মুচলেকা লিখে দিয়েছে নাবালিকার পরিবার।

জেলা জুড়ে নাবালিকার বিয়ের এমন প্রবণতা দেখে দিশেহার অবস্থা চাইল্ড লাইনের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘‘কেবল মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবারের ভিতরই সাতটি বিয়ের খবর এসেছে! সকলেই ছাত্রী। প্রত্যকেরই বয়স ১৫ বছরের নীচে!’’

বছর তিনেক আগে ইউনিসেফের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বাল্যবিবাহে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বীরভূমের। অজ্ঞতা, কুসংস্কার, সচেতনতার অভাবের সঙ্গে দারিদ্রতাই কমবয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলেই মনে করেন একাজের সঙ্গে যুক্তরা। এ রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনাও হয়েছিল সেই কারণেই। কিন্তু সচেতনতার যে কাজটি অন্দোলনের স্তরে নিয়ে গেলে ছবিটা অন্য হতে পারত সেটাই এখনও ঠিক মতো হচ্ছে না। আড়ালে মানেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। অন্য অংশ অবশ্য বলছে, সচতনতা বৃদ্ধি করে চেষ্টা চলছে বাল্যবিবাহ আটকানোর।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বাল্যবিবাহ রুখতে ব্লকগুলিকে সচেতনতা বৃদ্ধির অনুষ্ঠান করতে বলেছে সমাজকল্যাণ দফতর। সুসংহত শিশু বিকাশ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ী বলছেন, ‘‘ব্লকে ব্লকে নাবালিকা বিয়ে রুখতে সচেতনতা অনুষ্ঠান চলছে।’’ একই বক্তব্য কন্যাশ্রী প্রকল্পের জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত আধিকারিক মৃণ্ময় দাসেরও। মৃণ্ময়বাবু বলছেন, ‘‘বিভিন্ন ব্লকের বড় স্কুলে বা বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রীদের একসঙ্গে করে সচেতনতা প্রোগ্রাম করা হচ্ছে।’’ বুধবারই খয়রাশোলের লোকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে এমন একটি সচতনতা শিবির হয়েছে বলে জানান বিডিও তারকনাথ চন্দ্র। সিউড়ির অজয়পুরস্কুল বা লাভপুরের আবাডাঙা স্কুলে সচেতনতা অনুষ্ঠান হয়েছে জানিয়েছেন সিউড়ির বিডিও কৌশিক মুখোপাধ্যায় এবং লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস। দুবরাজপুর বিডিও বনমালি রায় বলেন, ‘‘সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু হবে সচেতনতা অনুষ্ঠান।’’ প্রশ্ন হল, স্কুলে স্কুলে সচেতনতার জন্য শিবির করলেও চাইল্ড লাইন জোর দিচ্ছে গ্রাম সংসদের চাইল্ড প্রটেকশন কমিটির উপর।

জেলা প্রশসনের এক কর্তা বলছেন, এলাকার তথ্য উঠে আসার জন্য যে চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি প্রতিটি সংসদ স্তরে তৈরি হওযার কথা তার অর্ধেক তৈরিই হয়নি। ফলে প্রথামিক ভাবে একটি নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে সেই খবরটা দেবে কে! দ্বিতীয়ত পরিবারের কুসংস্কার দূর করতে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন। কিন্তু সঠিক পরিকল্পানা ও বরাদ্দের অভাবে যেটা করা যাচ্ছে না। জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার নিরূপম সিংহ তাই কমিটিগুলি দ্রুত গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন