এক হাতে সুচ, অন্য হাতে ধরা রঙিন বই

এই সমস্ত কথা যখন হচ্ছে, ডান হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে উজ্জ্বল। চোখমুখ উজ্জ্বল তার। বাঁ হাতে ধরা রঙিন বই। শিশু দিবসের উপহার। মার ওই সমস্ত কথা মোটেও ভাল লাগছে না তার। ঘুরিয়ে ফিরেয়ে প্রশ্ন করে চলেছে, ‘‘এই রং পেনসিলগুলোও আমার? এখনই খুলে ফেলব?’’

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাঁ হাতে বিঁধে থাকা সুচ শরীরে জোগান দিচ্ছে রক্তের। বুধবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের বিছানায় আধ-শোওয়া হয়ে ছিল বছর দশেকের উজ্জ্বল রাজোয়াড়। মাসে মাসে পাড়া ব্লকের কালুহার গ্রাম থেকে এখানে আসতে হয় তাকে। বাবার পেশা দিনমজুরি। উজ্জ্বলের মা সুমিত্রা বলছিলেন, ‘‘ওর যখন বছর খানেক বয়স, থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। সুচ ফোটানোটা এখন যেন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে ছেলেটার।’’

Advertisement

এই সমস্ত কথা যখন হচ্ছে, ডান হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে উজ্জ্বল। চোখমুখ উজ্জ্বল তার। বাঁ হাতে ধরা রঙিন বই। শিশু দিবসের উপহার। মার ওই সমস্ত কথা মোটেও ভাল লাগছে না তার। ঘুরিয়ে ফিরেয়ে প্রশ্ন করে চলেছে, ‘‘এই রং পেনসিলগুলোও আমার? এখনই খুলে ফেলব?’’

বুধবার শিশু দিবসে পুরুলিয়ার কবিতা চর্চার প্রতিষ্ঠান ‘কাব্যায়ণ’ এমনই টুকরো খুশির মুহূর্ত ছড়িয়ে দল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের বাচ্চাদের মধ্যে। জয়পুরের রাঙাডি গ্রামের বছর চারেকের বরুণ মাহাতোর যখন আট মাস বয়স, এই রোগ ধরা পড়েছিল তারও। বরুণের বাবা, পেশায় দিনমজুর নিরঞ্জন বলেন, ‘‘মনমরা হয়ে থাকে ছেলেটা। বই আর রং পেনসিল পেয়ে হাসি ফুটেছে মুখে।’’

Advertisement

পাড়ার আনাড়ার বছর বারোর ঝন্টু বাগদিও বলছে, ‘‘বইতে অনেক ছবি আছে। বাড়ি গিয়ে দেখে দেখে আঁকব।’’

এই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। ওই বিভাগের চিকিৎসক বিকাশ সিংহানিয়া বলেন, ‘‘উপহার পেয়ে বাচ্চারা খুব খুশি হয়েছে। দেখেও ভাল লাগছে।’’ তিনি জানান, ওই বিভাগে থ্যালাসেমিয়ার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কোনও খরচ লাগে না। বিয়ের আগে সবাই যাতে সেটা করেন, সে জন্য আরও প্রচার দরকার বলে মনে করেন তিনি।

আর হাসপাতালের কোয়ালিটি ম্যানেজার দেবদীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই ছেলেমেয়েগুলোর তো নিয়মিত রক্তের দরকার হয়। সেটার ব্যবস্থা করলে ওদের আরও উপকার হয়। হাসপাতালে রক্তেরই সব থেকে অভাব।’’

রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করবেন বলে ‘কাব্যায়ণ’-এর তরফে জানিয়েছেন দোলন পাল, নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়রা। তাঁরা বলেন, ‘‘ওদের মুখের হাসিই আমাদের প্রাপ্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন