Makar festival

Makar Festival: মকরে অনিশ্চিত উৎসব, আশঙ্কায় চৌডল শিল্পীরা

কিন্তু করোনা-আবহে বদলে গিয়েছে পুরো ছবিটাই। কোথাও হাট বন্ধ, কোথাও হাট চললেও লোকজন নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আড়শা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৩
Share:

আড়শায় চৌডল তৈরির ব্যস্ততা। ছবি: সুজিত মাহাতো

করোনা সংক্রমণের জেরে কোথাও হাট বন্ধ, কোথাও হাট চালু থাকলেও ক্রেতার বিশেষ দেখা নেই। মকর পরবের আগে বাজারের এমন পরিস্থিতিতে সঙ্কটে পড়েছেন চৌডল শিল্পীরা। ধারদেনা করে কাঁচামাল কিনে সামগ্রী তৈরি করেছেন, দাবি তাঁদের অনেকের। দেনা শোধ করার মতো বিক্রি হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা।

Advertisement

মকর পরবে পুরুলিয়ায় উৎসবে মাতেন গ্রাম-শহর নির্বিশেষে আট থেকে আশি। সে উৎসবেই ছায়া ফেলেছে করোনা। এই উৎসব মানেই পুরুলিয়ার গ্রামগঞ্জের চৌডল শিল্পীদের লক্ষ্মীলাভের সময়। মকর সংক্রান্তির দিন টুসুকে রঙিন চৌডলের দোলায় নদী বা জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার রীতি রয়েছে। সংক্রান্তির দিন যেখানে জলাশয় সেখানেই কার্যত মেলা। গ্রাম থেকে শহর, মকর সংক্রান্তির আগে বাহারি চৌডলের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে নানা হাট। হাট সেরে বাড়ির খুদে সদস্যদের নিয়ে মানুষজন চৌডল নিয়ে ঘরে ফিরছেন, এটা পুরুলিয়ার চেনা ছবি।

কিন্তু করোনা-আবহে বদলে গিয়েছে পুরো ছবিটাই। কোথাও হাট বন্ধ, কোথাও হাট চললেও লোকজন নেই। আড়শার বামুনডিহা গ্রামের চৌডল শিল্পী পাগল যোগী জানান, ইতিমধ্যে শতাধিক চৌডল তৈরি করে ফেলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চৌডল তো আর এক দিনে তৈরি হয় না। প্রথমে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে কাঠামো তৈরি করতে হয়। সে জন্য বাঁশ কিনে সরু-সরু কঞ্চি তৈরি, রঙিন কাগজ মাপ করে কেটে আঠা দিয়ে তা কাঠামোয় জোড়া, রঙিন কাগজের ফুল তৈরি-সহ হরেক কাজ থাকে। ছেলেমেয়ে, স্ত্রী-সহ বাড়ির পাঁচ জন প্রায় এক মাস ধরে কাজ করছি। সব ঘরেই পড়ে আছে।’’ তিনি জানান, এক-একটি চৌডল তিনশো-সাড়ে তিনশো টাকায় বিক্রি হয়। টুসু মেলা উপলক্ষে চৌডলের প্রতিযোগিতার জন্য চার-পাঁচ হাজার টাকা দামের চৌডলের বরাতও মেলে। এ বার কয়েক জন বড় চৌডল তৈরির বরাত দিলেও, পরে তা বাতিল হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর স্ত্রী গোলাপির আশঙ্কা, ‘‘গোটা মাসের পরিশ্রম এ ভাবে জলে চলে যাবে! জিনিসগুলি রেখে দেওয়ার মতো ঘর নেই আমাদের। সব তো নষ্ট হয়ে যাবে।’’

Advertisement

গোপাল যোগী নামে আর এক শিল্পীর কথায়, ‘‘চৌডল বিক্রির জায়গা বলতে গ্রামীণ হাট। কাছাকাছি বড়টাঁড়, সেনাবনা, বেলকুঁড়ি, আড়শা-সহ বিভিন্ন হাটে এই সময়ে চৌডল বিক্রি হয়। এখন হয় হাট বন্ধ, নয় খরিদ্দার নেই। সারা বছরে এই সময়ে দু’পয়সা লাভের মুখ দেখা যায়। তাতে জল ঢেলে দিয়েছে করোনা।’’ এই গ্রামেরই আলন যোগীর স্বামী কাজের খোঁজে পুজোর পরে, চেন্নাই পাড়ি দিয়েছেন। আলন বলছিলেন, ‘‘ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমি চৌডল তৈরি করেছি মহাজনের কাছে ঋণ করে। তা শোধ দিতে পারব কি না, জানি না!’’

মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কংসাবতী নদীর দু’পাশে পুরুলিয়া ১ ও আড়শা ব্লকের একাধিক গ্রামে মানুষজনের উদ্যোগে মেলা বসে। দেউলবেড়া দশগ্রাম মেলা কমিটি মেলার উদ্যোক্তা। প্রতি বছর এই মেলায় চৌডলের ঢল নামে। মেলা কমিটির তরফে দেবীলাল মাহাতো বলেন, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে এ বার মেলা হবে কি না ঠিক নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন