সংস্কার শেষে খুলছে লালগির্জা

সংস্কারের পরে ফের খুলতে চলেছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বীরভূমের প্রাচীন ‘অল সেন্টস্ চার্চ’। সিউড়ির পশ্চিম লালকুঠি পাড়ার গির্জাটিকে মানুষ অবশ্য ‘লালগির্জা’ নামেই চেনেন। বড়দিনের প্রাক্কালে আজ, শনিবার সন্ধ্যায় সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে শতাব্দী প্রাচীন ওই গির্জা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৬
Share:

খোলার আগে। —নিজস্ব চিত্র

সংস্কারের পরে ফের খুলতে চলেছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বীরভূমের প্রাচীন ‘অল সেন্টস্ চার্চ’।

Advertisement

সিউড়ির পশ্চিম লালকুঠি পাড়ার গির্জাটিকে মানুষ অবশ্য ‘লালগির্জা’ নামেই চেনেন। বড়দিনের প্রাক্কালে আজ, শনিবার সন্ধ্যায় সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে শতাব্দী প্রাচীন ওই গির্জা। নতুন রঙের গন্ধ মেখে সন্ধ্যার আগেই আলোয় সেজে উঠবে গোটা এলাকা। নতুন সাজে গির্জাটিকে পেয়ে খুশির হাওয়া শহরের খ্রিস্টান সমাজ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও। সকলেই বলছেন, ‘‘এ বারের বড় দিনটা আরও স্পেশ্যাল হয়ে উঠবে।’’

প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী, ব্রিটিশ আমলে সিউড়িতে দু’টি গির্জা তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যেই এটিই বেশি সুদৃশ ছিল। কিন্তু ঠিক কত সালে, কে নির্মাণ করেছিলেন— তার প্রামাণ্য নথি বর্তমান গির্জা কমিটির কাছে নেই। সুকুমার সিংহ তাঁর ‘সিউড়ি শহরের ইতিহাস’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, এই গির্জার নির্মাণকাল ১৮৭৬ সাল। যদিও কে নির্মাণ করেছেন, সেই তথ্য সুকুমারবাবুও দিতে পারেননি। গির্জা কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান অচিনকুমার নাথের কথায়, ‘‘সুকুমারবাবু ওই বইতে যা লিখেছেন, তার বেশি তথ্য আমাদেরও জানা নেই।’’

Advertisement

বেশ কয়েক বছর ধরেই জীর্ণ হয়ে পড়েছিল গির্জাটি। বিশেষ করে গির্জার ছাদ। কড়ি-বরগা ও ইতালিয়ান টাইলস‌্ দিয়ে মাছের আঁশের আকৃতিতে তৈরি ছাদ ছিল এই গির্জার অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু কালের প্রকোপে জীর্ণ হয়ে যাওয়া সেই ছাদ থেকেই প্রায় দিন খসে পড়ছিল টালির টুকরো। অচিনবাবু বলছেন, ‘‘তাই বাধ্য হয়ে মূল ছাদ ভেঙে ফেলে নতুন ঢালাই দিতে হয়েছে। শুধু ছাদ ঢালাই নয়, দরজা জানালা তৈরি, মেরামত থেকে রং, সবই নতুন করে করা হয়েছে।’’

শনিবার গির্জার ‘পুনস্থাপনে’র অনুষ্ঠানের পরে সান্ধ্য উপাসনা হবে। বর্তমানে শহরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত কমবেশি ৫০টি পরিবারের বাস। সকলেই তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায়। কবিতা পাত্র, সুবীর ঘোষরা বলছেন, ‘‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, সকলের মিলিত প্রয়াসে গির্জাটিকে বাঁচানো গিয়েছে।’’ কয়েক পুরুষ ধরে গির্জার কেয়ারটেকার রয়েছেন ইনম্যানুয়াল দাসের পরিবার। যুবক ইনম্যানুয়াল বলছেন, ‘‘কত বছর থেকে বড়দিন দেখছি, এ বারটা সকলের জন্য স্পেশ্যাল।’’ শুধু খ্রিস্টানরাই নন, বড়দিনে মোমবাতি নিয়ে লালগির্জায় হাজির হন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও। কমিটির আশা, সকলেরই এ বার ভাল লাগবে।

তবে, একটা আক্ষেপ যাচ্ছে না অনেকেরই। বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে যে গঠনশৈলীতে গির্জার ছাদটি তৈরি হয়েছিল, তা হুবহু করতে না পারার। তা ছাড়া এ বার লাগানো যায়নি ঐতিহ্যবাহী লালগির্জার সেই বিশাল ঘণ্টাটিও। চেয়ারম্যান বলছেন, ‘‘বাস্তবকে তো মানতেই হবে। তবে এক কুইন্ট্যাল ওজনের ঘণ্টাটি লাগাতে যে পরিমাণ খচর করার প্রয়োজন, এই মুহূর্তে সেটা করা যাচ্ছে না। পরের বার নিশ্চয়ই দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন