সিউড়িতে আক্রান্ত সিভিক ভলান্টিয়ার

নিয়ম শেখাতে গিয়ে ফের মার

অভিযোগ, এমন সময় আব্দুল লতিফ নামে ওই খালাসি এগিয়ে এসে সিভিক ভলান্টিয়ার বুবাইয়ের মুখে ঘুসি মারেন। সেখান থেকেই বাসের চালক ও খালাসিকে সিউড়ি থানায় নিয়ে আসা হলে আটক করে রাখা হয় খালাসি লতিফকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩১
Share:

আবারও মার সিভিক ভলান্টিয়ারকে। এ বার আক্রমণের শিকার বুবাই দলুই নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার। সিউড়ি শহরের এসপি মোড়ের কাছে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত বেসরকারি বাসের এক খালাসিকে আটক করেছে সিউড়ি থানার পুলিশ। এই ঘটনা জনমানসে উসকে দিয়েছে পুরনো প্রশ্ন। সিউড়ি শহরে পথ চলার নিয়ম শেখাতে যাওয়াই কি অপরাধ? কেননা পরিসংখ্যান বলছে, গত দু’বছরে শুধু সিউড়িতেই অন্তত ছ’বার মার খেয়েছেন ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়াররা।

Advertisement

শহরের যানজট এড়াতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ, প্রশাসন। টোটো চলাচল নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ দখলদারির কিছু অংশ হঠানো, কিছু রাস্তাকে ‘ওয়ান ওয়ে’ ঘোষণা করা ইত্যাদি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সিউড়ি শহরের স্বয়ংক্রিয় সিগনালিং ব্যবস্থা। এসপি মোড়ে ট্রাফিক সিগনালের কাছে ট্রাফিক সামলাচ্ছিলেন বুবাই। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি থেকে তারাপীঠগামী একটি বাস সিগনাল না মেনে এগিয়ে যায়। কেন নিয়ম মানা হল না, জিজ্ঞাসা করতে বাসটির পিছু ধাওয়া করেন ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা বুবাই ও সঙ্গী সিভিক ভলান্টিয়াররা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাংলার কাছাকাছি বাসটিকে ধরে ফেলেন তাঁরা। বচসা শুরু হয় বাসের চালক, কন্ডাক্টটরের সঙ্গে।

অভিযোগ, এমন সময় আব্দুল লতিফ নামে ওই খালাসি এগিয়ে এসে সিভিক ভলান্টিয়ার বুবাইয়ের মুখে ঘুসি মারেন। সেখান থেকেই বাসের চালক ও খালাসিকে সিউড়ি থানায় নিয়ে আসা হলে আটক করে রাখা হয় খালাসি লতিফকে। যদিও একটি বাস মালিক সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমি শুনেছি দু’পক্ষের মধ্যে মারপিঠ হয়েছে। যিনিই দোষী হন, যেন শাস্তি পান। তবে প্রকৃত দোষ কোন পক্ষের সেটা নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখা উচিত।’’ প্রায় একই সুর আইএনটিটিইউসি বাস শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি রাজিবুল ইসলামের।
তিনি বলেন, ‘‘আমার প্রত্যেকটি বাসের শ্রমিক ও কর্মীদের জানিয়েছি তাঁরা যেন আইন না ভাঙেন বা নিজেদের হাতে আইন তুলে না নেন। সেক্ষেত্রে কেউ আইন ভাঙলে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক। তবে তার আগে প্রকৃত সত্য সামনে আসা দরকার।’’ তবে জেলা পুলিশের একটা অংশ জানাচ্ছে, রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে অনুশাসন না মানাই যেন রীতি হয়ে উঠেছে। বাধা দিলেই আক্রান্ত হতে হচ্ছে।

Advertisement

পথচলার নিয়ম শেখাতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা এনভিএফ ও এএসআই পদমর্যাদার কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আগে একাধিকবার ঘটেছে। চলতি বছরের মে মাসে শহরের বেণীমাধব মোড়ে ওসি ট্রাফিক প্রশান্ত শিকদারের নেতৃত্বে ট্রাফিক সামলাচ্ছিলেন এনভিএফ কর্মী মহম্মদ ইসমাইল। বিনা হেলমেটে বাইক চালিয়ে সিউড়ির লম্বোদরপুরে ফেরার এক তৃণমূল কর্মীর পথ অটকালে তিনি এনভিএফ কর্মীকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি ও ডিসেম্বরে এই শহরে আক্রান্ত হয়েছিলেন দু’জন এনভিএফ কর্মী। হেলমেটহীন দুই মোটরবাইক আরোহীকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় সিউড়ি প্রশাসন ভবনের সামনেই তুষার মণ্ডল নামে ওই এনভিএফ কর্মীকে মারধর করে বাইক আরোহী যুবকেরা।

শহরের বাসস্ট্যান্ডে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে টোটো চালকের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন শেখ রৌশন নামে অপর এক এনভিএফ কর্মী। প্রতিটি ঘটনায় অবশ্য
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাতেও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ছেদ পড়ছে কই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন