West Bengal Budget 2024-25

মন ভরল না সিভিকদের, খুশি লক্ষ্মীরা

পুলিশে কাজের সুযোগ বৃদ্ধির ঘোষণাকে অত্যন্ত ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখলেও বেতনবৃদ্ধিতে অখুশি অনেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৮
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

লক্ষ্মীর ভান্ডারের ভাতা বৃদ্ধি থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ় পুলিশদের বেতনবৃদ্ধি। সঙ্গে রাজ্যের বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এককালীন অনুদান দেওয়া বা অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকাদের ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা। লোকসভা ভোটের মুখে বাজেটের ঘোষণায় কার্যত ‘কল্পতরু’ ভূমিকায় রাজ্য সরকার। এই প্রেক্ষিতে বিরোধীদের কটাক্ষ, নির্বাচনের বৈতরণি পার হতেই ‘জনমোহিনী’ বাজেট করা। তৃণমূল পাল্টা রাজ্য বাজেটকে সাধারণের স্বার্থরক্ষার বাজেট বলে দাবি করছে।

Advertisement

গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে সাধারণ জাতিভুক্ত মহিলারা মাসিক ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত মহিলারা এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। এ দিনের বাজেটে ওই ভাতা বাড়িয়ে যথাক্রমে এক হাজার টাকা ও বারোশো টাকা করার ঘোষণা হয়েছে। রঘুনাথপুর শহরের তরুণী টুম্পা রায় বলেন, “পাঁচশো টাকায় হাতখরচ চলে যেত। টুকিটাকি কেনাকাটাও হত। ভাতা দ্বিগুণ হল। ভালই লাগছে।”

সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ় পুলিশদের বেতন এক হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা রয়েছে বাজেটে। তাঁদের মধ্যে থেকে রাজ্য পুলিশে কাজের সুবিধা দেওয়ার ‘কোটা’ ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। পুলিশে কাজের সুযোগ বৃদ্ধির ঘোষণাকে অত্যন্ত ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখলেও বেতনবৃদ্ধিতে অখুশি অনেকে। রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার এক সিভিক ভলান্টিয়ারের কথায়, “থানার অন্য পুলিশকর্মীদের মতোই কাজ করতে হয় আমাদের। অথচ বেতনের ফারাক অনেকটা। বেতন আরও বাড়লে ভাল হত।” বাঁকুড়ার সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশও বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ জানান।

Advertisement

পাশাপাশি, পোর্টালে নাম থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের আওতায় এনে ভিন্ রাজ্যেও তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব আছে বাজেটে। তা নিয়ে বেঙ্গালুরুতে কর্মরত আড়শার এক পরিযায়ী শ্রমিক নন্দলাল মাহাতোর প্রশ্ন, “স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তো থাকবে বাড়িতে। সে ক্ষেত্রে কি আমাদের মতো ভিন্ রাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য আলাদা করে কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে!” পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিককল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা খুবই উপকৃত হবেন। কারণ অর্থের অভাবে অনেকে অসুস্থ হলেও যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারেন না।’’

এ দিকে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির অধিকাংশই ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দের বদলে ব্যাঙ্ক থেকে বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে বেশি সুবিধা হত বলে মনে করছে। সাঁতুড়ির একটি গোষ্ঠীর কর্মকর্তা মিতা সেনের কথায়, “কোনও প্রকল্পের কাঁচামাল কিনতেই ওই টাকা খরচ হয়ে যাবে। তার চেয়ে বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা হলে বেশি সুবিধা হত।” চড়া দরের জিনিসপত্রের বাজারে মাত্র পাঁচশো টাকা ভাতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সুবিধা দেখছেন না অঙ্গনওয়াড়ির সহায়িকারাও। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড হেল্পার্স ইউনিয়ন’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক চায়না কর্মকার বলেন, “৫০০ টাকা ভাতা বাড়িয়ে কিছু হবে না। আমাদের দাবি, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের সরকারি কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া-সহ ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে। সেই দাবি থেকে সরছি না।”

বাজেটের পক্ষে, বিপক্ষে নানা মত উঠে এলেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, “প্রান্তিক মানুষের স্বার্থরক্ষার এই বাজেটে উপকৃত হবেন সমস্ত শ্রেণির মানুষই।” এ দিকে, বাজেটের ঘোষণা পূরণের বাড়তি টাকা আসবে কোথা থেকে আসবে, প্রশ্ন তুলছেন বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এমনিতেই ঋণে জর্জরিত রাজ্য সরকার। তার পরে এত ভাতা, বেতন বৃদ্ধির টাকা রাজ্য পাবে কোথা থেকে, বাজটে তার স্পষ্ট কোনও উল্লেখ নেই। রাজ্য আরও ঋণ নিয়ে ঋণের বোঝা আরও বাড়াবে।” অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকাদের ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে তারাই আন্দোলন করছেন মনে করিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, “আমাদের আন্দোলনের ফলেই নির্বাচনের আগে এটা হল। ভাল কথা। তবে এ সব করেও লোকসভা নির্বাচনে শেষরক্ষা হবে না।”

বাঁকুড়ার সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির তোপ, “ভোটের স্বার্থে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বাজেটের নামে চমক দেওয়া হয়েছে। দলের হয়ে ভোটপ্রচার করতে বিধানসভাকে ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী।” বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখাও বলেন, “দিশাহীন, ভ্রান্ত ও মানুষকে কর্মবিমুখ করার বাজেট। তৃণমূল সরকার কখনও বাস্তবের মাটিতে পা রেখে চলে না।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর যদিও দাবি, “বাজেটের পরে ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনি হচ্ছে। বিরোধীরা কুপোকাৎ! বিজেপি ধনপতিদের হয়ে আর তৃণমূল যে গরিব মানুষের হয়ে কাজ করে, তা প্রমাণ
হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন