বিরোধী নয়, ভোটের ময়দানে যুযুধান শাসকদল তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠী! আর সাংসদ বনাম জেলা সভাপতির সমর্থনে সেই ভোট-যুদ্ধে জয়ী হল শেষ পর্যন্ত দেবব্রত সরকার গোষ্ঠী। ৭টি অফিস বিয়ারার ছাড়াও বেশির ভাগ কাউন্সিলর পদেও জয়ী হয়েছেন তাঁরা।
সরাসরি কোনও দলীয় প্রতীকে বিশ্বভারতী কর্মিসভার নির্বাচন না হলেও, মঙ্গলবার অন্য রকমের ভোট দেখল শান্তিনিকেতন! বরাবর দক্ষিণপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বিশ্বভারতী কর্মিদের দুই নেতা দেবব্রত সরকার (গগন) এবং দেবব্রত হাজারি (তরু) এ বার ভোটের ময়দানে প্রতিদ্বন্দিতা করে আলাদা ভাবে কর্মিসভার ভোটে প্যানেল দিয়েছিল। সূত্রের দাবি, গগন গোষ্ঠীর মাথায় সরাসরি হাত রেখেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অন্য দিকে দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে কোনও বিরোধ না থাকলেও, এলাকার তৃণমূলের সাংসদ অনুপম হাজরার সমর্থন রয়েছে দেবব্রত হাজারির সঙ্গে। কর্মিসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করা ওই দুই গোষ্ঠীর কর্মীদের একাংশের দাবি, দুই দাদার বিরোধই এ বার ব্যবধান গড়ে তুলল।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই নির্বাচনে, চলতি বছর দুটি প্যানেল ছিল তৃণমূলের। হাওয়ায় জল্পনা ছিল, জেলা সভাপতি গোষ্ঠীর সহায়তা বনাম বোলপুরের তৃণমূলের সাংসদের সহায়তা। সোমবার রাত যত গড়িয়েছে, ততই পরিষ্কার হয়েছে জেলা সভাপতি অনুগামী এবং সাংসদ অনুগামীদের আনাগোনা। দুই গোষ্ঠীর হয়েই জেলার রাজনীতির দাদাদের মাঠে নামতে দেখা যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই অনুব্রত মণ্ডল অনুগামী দলের বোলপুর ব্লক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে শহর এবং পুরসভা তথা ওয়ার্ড নেতৃত্ব, দেবব্রত সরকারের হয়ে মাঠে নামে। ভোট নিয়ে জোর জল্পনা চলে। যুযুধান তৃণমূলের দুই শিবিরের জেরে বাড়তি গণ্ডগোলের আশঙ্কায় এ দিন সকাল থেকে অবশ্য শান্তিনিকেতন চত্বরে পুলিশ, র্যাফ এবং কমব্যাট বাহিনীর টহলদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা দশটার কিছু আগে থেকেই বাহিনী নিয়ে খোদ হাজির ছিলেন বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ।
বিশ্বভারতীর বিভিন্ন মহলের দাবি, ১৯৬৯ সাল থেকে চলে আসা কর্মিসভার নির্বাচনে সরাসরি রাজনৈতিক দলের এমন গোষ্ঠী বিবাদ, এমন দাপাদাপি কোনও দিন দেখেনি শান্তিনিকেতন। আবার একই ভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কর্মীসভার নির্বাচনে এমন পুলিশি ব্যবস্থাও মনে করতে পারছেন না কেউ। উল্লেখ্য, দু’বছর মেয়াদের জন্য বিশ্বভারতী কর্মিসভার নির্বাচন হয় শান্তিনিকেতনে এবং কলকাতার গ্রন্থন বিভাগে। মোট ৮০৮ জন কর্মী ভোটারের মধ্যে ২২জন কর্মী কলকাতা গ্রন্থন বিভাগের। ৫২টি পদের জন্য ভোট নেওয়া হয়, কর্মিসভার নির্বাচনে। কলকাতায় সোমবার ২২ জনের ভোট নিয়েছে কর্মীসভা নির্বাচন পরিচালন সমিতি। এ দিন শান্তিনিকেতনে ৭৮৬ কর্মীর ভোট নিয়েছে নির্বাচন পরিচালন সমিতি। সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান তথা সহ-কর্মসচিব (শিক্ষা ও গবেষণা) সত্যনারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, “দু’টি প্যানেলের মধ্যে সভাপতি পদে দেবব্রত সরকার ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিদ্যুৎ সরকার জয়ী হয়েছেন। দেবব্রতবাবু ও বিদ্যুৎবাবুকে নিয়ে সাত সদস্যের অফিস বিয়ারের প্যানেল কর্মিসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।”