জায়গা নেই, ছোট হোক ছৌ মুখোশ

তিনি এলেন। খোঁজ নিলেন জেলার কোথায় কী সমস্যা। সেই সঙ্গে নিজেই দেখিয়ে দিলেন সমস্যা সমাধানের উপায়।তিনি এলেন। খোঁজ নিলেন জেলার কোথায় কী সমস্যা। সেই সঙ্গে নিজেই দেখিয়ে দিলেন সমস্যা সমাধানের উপায়।

Advertisement

প্রশান্ত পাল ও শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডপ

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫১
Share:

পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুজিত মাহাতো।

ব্যাটারি ময়দানে

Advertisement

পুরুলিয়া তো বটেই, পাশের বাঁকুড়া জেলা থেকেও হিন্দিভাষীরা মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাটারি ময়দানের সভায় যোগ দেন। মমতা টানা হিন্দিতে বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আমি যতটা বাঙালি, ততটাই হিন্দি ভাষীদের সঙ্গে রয়েছি। আপনাদের অনুষ্ঠান হলে আমাকে ডাকবেন। আসার চেষ্টা করব।’’ তিনি জানান, এখানকার হিন্দিভাষীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন বলেই এ দিন আলাদা করে সময় করেছেন।হিন্দিভাষীদের একটা বড় অংশই ব্যবসায়ী। তাই তাঁদের কাছে এই রাজ্যে নির্ভয়ে ব্যবসা করার ডাক দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল, দুর্গাপুরে অনেক সুযোগ রয়েছে। আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন।’’ সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে জিএসটি, নোটবাতিলের জেরে ব্যবসার কত ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা এখন ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরকে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু, এ রাজ্যে আপনারা শিল্প করলে, আমরা সবরকম ভাবে সহযোগিতা করব।’’ চালকল মালিক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার চালকলগুলির ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বঞ্চনা করছে।’’ একই সঙ্গে জেলায় হিন্দিভাষীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কিচু প্রস্তাবও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছেন।

নজরে সাফাই

Advertisement

রঘুনাথপুর শহরে আবর্জনা সাফাইয়ের সমস্যা দীর্ঘদিনের। তাও মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তিনি রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে জানতে চান, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের সমস্যা কী ভাবে মিটবে? রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে বলেন, ‘‘আমি আসানসোল থেকে আপনার শহরে ঢোকার সময় দেখলাম, রাস্তার দু’পাশে ময়লা জমে রয়েছে।’’ মমতা বলেন, ‘‘কেন পড়ে থাকবে, দেখে নিন। সলিড ওয়েস্ট সিস্টেম ভাল কর। এখন তো অনেক সুবিধা রয়েছে, রিসাইকেল করা যায়। এরকম থাকলে কোনও শিল্পই আসবে না। সমস্যা যদি থাকে, তাহলে এসডিও দেখে নিন।

পরে রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরের মধ্যে পুরসভার নিজস্ব জমি নেই। পাশের পঞ্চায়েত এলাকায় প্রশাসন জমির ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু, সেখানকার কিছু লোকজন সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট তৈরির বিরোধিতা করছেন। তা জন্য প্রকল্প আটকে রয়েছে।’’

স্বাস্থ্যে সতর্কতা

মুখ্য সচিব মলয় দে বলেন, ‘‘সাঁতুড়ি ও নিতুড়িয়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসা না করে বড় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রবণতা একটু বেশি দেখছি।’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘জটিল অবস্থার রোগীরাই যাচ্ছেন।’’ কিন্তু, মলয়বাবু বলেন, ‘‘তাও ১০ শতাংশের কম হওয়া চাই।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘নিতুড়িয়ায় আগের থেকে রোগী রেফার করা কমেছে। রঘুনাথপুরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ভাল চলছে বলে, সেখানেও রোগীরা যাচ্ছেন।’’ মমতা বলে ওঠেন, ‘‘সে জন্য সব চাপ আপনি এক জায়গায় দিয়ে দেবেন। আর এক দিকে কোনও কাজ করতে হবে না। বাহ্। যাঁকে প্রয়োজন, তাঁকে পাঠান। যাঁকে প্রয়োজন নেই, তাঁকে কেন পাঠাবেন?’’

ছোট মুখোশ

ছৌয়ের ছোট মুখোশ তৈরিতে উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ছৌনাচের মুখোশ বড়। বরং ছোট ছোট করা হোক। কারণ লোকে এখন ফ্ল্যাটে থাকেন। সেখানে বড় জায়গা নেই। ছোট ছোট জিনিস তাঁরা রাখতে পছন্দ করেন।’’ ছৌয়ের ভাল দোকান করতে পরামর্শ দেন। সেখানে ছোট থেকে বড় মুখোশ করতে বলেন তিনি। জেলাশাসক মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, লোক শিল্প ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি একটি মিউজিয়াম তৈরি করে চান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমিতে করা হোক।’’

আরও কিছু

এই জেলা গ্রামীণ সড়ক তৈরিতে কেন পিছিয়ে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘টেন্ডারে একটু দেরি হয়েছে।’’ রাজ্যের এক কর্তা বলেন, ‘‘কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ মমতা চটপট কাজ সারতে বলেন। একই সঙ্গে জঙ্গলমহলের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি সজাগ করেছেন। বাঘমুণ্ডির ওসিকে বলেন, ‘‘বাইরের লোক আসছে, আপনি খবর রাখেন?’’ ওসি জানান, নাকা তল্লাশি চলছে। সিভিক কর্মীরা খোঁজ খবর রাখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন