নিয়মের গেরো

এসেও ফেরত গেল ক্ষতিপূরণের টাকা

টানা দু’বছর হাপিত্যেশ করে থাকার পরে হাতির হানায় ক্ষতিপূরণের টাকা এল। আবার ঘুরে চলেও গেল।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৭:৩১
Share:

কখনও ঝাড়খণ্ড থেকে, কখনও বা বাঁকুড়া থেকে হাতি ঢুকছে পুরুলিয়ায়। যে টুকু চায হয়, তাও হাতির পেটে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে।—ফাইল চিত্র

টানা দু’বছর হাপিত্যেশ করে থাকার পরে হাতির হানায় ক্ষতিপূরণের টাকা এল। আবার ঘুরে চলেও গেল।

Advertisement

কেন?

বন দফতরের কর্তাদের ব্যাখ্যা, অর্থবর্ষের একেবারে শেষে যখন টাকা এল তখন বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেই টাকা বিলির আর উপায় ছিল না। তাই ফেরত চলে গিয়েছে প্রায় পুরো টাকাটাই। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮ লাখ।

Advertisement

ঝালদা রেঞ্জের হেঁসলা গ্রামের কান্ত কুইরি বা কোটশিলা রেঞ্জের জাবর গ্রামের শ্রীকান্ত মাহাতোরা জানালেন, একবার নয় বহুবার হাতির পাল এলাকায় ঢুকে তছনছ করে গিয়েছে খেতের ফসল। বনকর্মীরা সরজমিনে এসে ক্ষতিপূরণের হিসেবেও করে গিয়েছেন। ওইটুকুই। হাতে আসেনি টাকা। এ বার সেটা এসেও ঘুরে চলে গেল!

২০১৪-’১৫ ও ২০১৫-’১৬ আর্থিক বর্ষের জন্য মোট অর্থ এসেছিল ৬২ লক্ষ ৭ হাজার। সেই তথ্য জানিয়ে পুরুলিয়ার ডিএফও কুমার বিমল জানান, ওই টাকা থেকে হাতির হানায় মৃত দুই পরিবারের নিকট আত্মীয়কে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দেওয়া গিয়েছে। সেটাও নির্বাচন কমিশনের বিশেষ অনুমতি নিয়ে। আর বাকিটা ফেরত গিয়েছে। তিনি বলছেন, ‘‘ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে আমরা টাকা হাতে পাই। তাই এই টাকা দেওয়া যায়নি। তারপর আর্থিক বছর শেষ হয়ে যায়।’’ এ বার কী হবে? ‘‘ওই দ্রুত টাকা ফেরত পেতে সরকারকে চিঠি লিখেছি। দেখা যাক কবে টাকা আসে’’— যোগ করছেন তিনি।

পুরুলিয়া বন বিভাগের ঝালদা, কোটশিলা, জয়পুর, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, বলরামপুর, মাঠা ও অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জ বন দফতরের পরিভাষায় ‘এলিফ্যান্ট জোন’।

কংসাবতী (দক্ষিণ) বন বিভাগের কিছুটা এলাকাও এই জোনের আওতায় রয়েছে। এই রেঞ্জের গ্রামগুলিতে হামেশাই হাতির দল ঢুকে ফসল তছনছ করে। ক্ষতি করে ঘরবাড়ির। গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে ঝালদার কয়েক’টি গ্রামে হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরজমিনে দেখতে গিয়ে বনকর্মীরা আটকা পড়ছিলেন গ্রামবাসীর হাতে। পরে আধিকারিকেরা গিয়ে দ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বনকর্মীরা ঘেরাও মুক্ত হন।

পুরুলিয়া বন বিভাগের একটি রেঞ্জের জনৈক কর্মীর কথায়, ‘‘কারও ফসলের ক্ষতি হয়েছে, কারও শাকসব্জির। কারওবা বাড়ি ভেঙেছে। সকলেরই ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রায় বছর দু’য়েক ধরে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।’’ ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে গিয়ে কর্মীরা ঘেরাও হয়ে পড়ছেন সেই কারণেই, স্পষ্ট মেনে নিচ্ছেন তিনি। ঘেরাওয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন এক বনকর্মীর কথায়, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে গ্রামে গেলে আমাদের বলা হচ্ছে ও সব লোক দেখানো করছেন আপনারা। না হলে কেউ ক্ষতিপূরণের একটা টাকাও পাচ্ছে না কেন?’’

বন দফতর সূত্রের খবর, শুধু ঝালদা রেঞ্জেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৩০ লক্ষ, বাঘমুণ্ডিতে ২৪ লক্ষ।

বাকি রেঞ্জগুলিতে এতটা পরিমাণে না হলেও কিছু টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। জানা গিয়েছে ওই ৬২ লক্ষ ৭ হাজার টাকা মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে জেলায় পৌঁছয়। তত দিনে ভোট-নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আবার ভোট শেষের আগেই শেষ হয়েছে অর্থবর্ষ। যে কারণে টাকা ফেরত গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে চড়ছে ক্ষোভ। কোটশিলা রেঞ্জের তাহেরবেড়া গ্রামের ধনঞ্জয় মাহালি, জাবর গ্রামের শ্রীকান্ত মাঝি বা ঝালদা রেঞ্জের হেঁসলা গ্রামের কান্ত কুইরীরা জানালেন, মাসের পর মাস বন দফতরে আসছেন। আর ফিরে যাচ্ছেন। প্রতিবারই শুনতে হচ্ছে টাকা এসে যাবে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এত দিন আশ্বাস দিচ্ছিলাম। টাকা ফেরত যাওয়ার পরে এ বার কী বলব বলুন তো?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন