তাপাইপুরে আদিবাসী বধূকে গণধর্ষণের নালিশ

সাঁইথিয়ার গ্রাম থেকে পরিজন ও পড়শিদের সঙ্গে সিউড়ি ২ ব্লকের তাপাইপুরে যাত্রা দেখতে এসেছিলেন বছর বাইশের ওই নির্যাতিতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩০
Share:

নির্যাতিতা: ডাক্তারি পরীক্ষার পথে। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

বোলপুরের রজতপুরের ক্ষত এখনও দগদগে। এর মধ্যেই যাত্রা দেখতে যাওয়া এক আদিবাসী বধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার বিকেলে সিউড়ি থানায় এই মর্মেই অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিতা।

Advertisement

সাঁইথিয়ার গ্রাম থেকে পরিজন ও পড়শিদের সঙ্গে সিউড়ি ২ ব্লকের তাপাইপুরে যাত্রা দেখতে এসেছিলেন বছর বাইশের ওই নির্যাতিতা। অভিযোগ, সেখান থেকেই তাঁর মুখ, চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে জনা দশেক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার গভীর রাতে। অপরাধীদের মধ্যে চেনা এক আদিবাসী যুবক রয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নির্যাতিতা।

সিউড়ি থানা অভিযোগ পাওয়ার পরেই জেলা হাসপাতালে নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়েছে। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমার বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। অপরাধীরা ধরা পড়বেই।’’

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছে?

নির্যাতিতার বাপেরবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে সাঁইথিয়ার কুলতোড় আদিবাসী পাড়ায় এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। শুক্রবার সিউড়ি ২ ব্লকের তাপাইপুর গ্রামে একটি ছোট মেলা চলছিল। ছিল আদিবাসীদের যাত্রার আসর। সাঁইথিয়ার গ্রাম থেকে স্বামী, শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্য ও পড়শিদের সঙ্গে ট্রাক্টর ভাড়া করে সেই অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন ওই বধূ। নির্যাতিতার কথায়, “অনুষ্ঠান চলাকালীন পড়শি দুই মহিলার কথায় আসর ছেড়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গিয়েছিলাম। আলো, আঁধারির মাঝে হঠাৎ বেশ কয়েক জন যুবক এসে জোটে।” তাঁর অভিযোগ, “আমার দুই সঙ্গী তখন ওখানেই ছিল। কিছু বোঝার আগেই ছেলেগুলো আমার মুখ-চোখে কাপড় বেঁধে বেশ খানিকটা দূরে ফাঁকা জায়াগায় নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে। তখনই এক যুবককে চিনতে পারি।”

পরিজনেরা জানিয়েছেন, ওই অত্যাচারের পরে লজ্জায়, অপমানে-যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছিলেন ওই বধূ। মঙ্গলবার তিনি যখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি, সে দিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে নির্যাতিতার মুখে-চোখে একই রকম আতঙ্ক ও যন্ত্রণার ছাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। কী ভাবে উদ্ধার হলেন নির্যাতিতা? এত দেরি করে কেন অভিযোগ জানালেন?

নির্যাতিতার ভাসুর জানাচ্ছেন, যাত্রার আসরে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা বসার ব্যবস্থা ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে কখন যে ভাইয়ের স্ত্রী বাইরে এসেছে জানতামও না। রাত একটার পরে আমি আসর ছেড়ে
ট্রাক্টরটা দেখতে বাইরে এসেছিলাম। তখনই দেখি, ভাড়া করা ট্রাক্টরটার কাছে বসে সমানে কেঁদে চলেছে বৌমা। এত রাতে একা কেন, কী হয়েছে, জিজ্ঞেস করায় শুধু বলছিল, আমাকে ছেলেগুলো টেনে নিয়ে গিয়েছিল।’’ কিন্তু, অত্যাচার যে হয়েছে লজ্জায় সেটা জানাতে পারেননি ওই বধূ। বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়েও ওই বধূ রাতের ঘটনা খুলে বলেননি বলে পরিজনদের দাবি। বাপের বাড়ি, মহম্মদবাজারে গিয়ে ওই বধূ সমস্ত ঘটনা সবিস্তারে জানান। নির্যাতিতার ভাসুরের কথায়, ‘‘অত্যাচারের কথা শুনে সকলের মাথা রাগে আগুন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, অভিযুক্তকে মারধর করে আইন হাতে নিতে চাইনি।’’

নির্যাতিতার দাদা জানিয়েছেন, রবিবার বোন সমস্তটা বলার পরে মহম্মদবাজার থানায় অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। মহম্মদবাজার থানা পরামর্শ দেয়, ঘটনাস্থল যখন সিউড়ি থানা, তখন ওখানে অভিযোগ করাই ভাল। তারপরই সিউড়ি এসে অভিযোগ করেন নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার সন্দেহ, পড়শি দুই মহিলার সঙ্গে হয়তো যোগসাজস ছিল অভিযুক্তদের। সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খোঁজ চলছে অভিযুক্তদেরও।

এ সবের পরেও প্রশ্নটা ঘুরছে, বীরভূমে নারী নির্যাতন কী ক্রমশ বাড়ছে? পরপর ঘটতে থাকা ঘটনা কিন্তু তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। পড়শি যুবক ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ। অসম্মান ও মানসিক অবসাদে গায়ে আগুন লাগিয়ে নিজেকে শেষ করেছেন রজতপুরের কলেজ পড়ুয়া নির্যাতিতা। সেই স্মৃতি টাটকা। তারই মধ্যে আদিবাসী বধূকে গণধর্ষণ! যা ভাবাচ্ছে পুলিশ, প্রশাসনকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন