নালিশ ঠুকুন অ্যাপে

স্মার্ট প্রশাসনের লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিষেবা দেওয়ার কাজে গতি আনতে চাইছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। গত কয়েক বছর ধরেই প্রযুক্তির হাত ধরে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালিয়ে আসছে। এ বার সেই কাজে এক কদম এগোল এই জেলার গঙ্গাজলঘাটি ব্লক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গঙ্গাজলঘাটি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৬
Share:

সহজ ক’টি ধাপেই ফোনে ইনস্টল করা যাবে ‘নালিশ’। নিজস্ব চিত্র

স্মার্ট প্রশাসনের লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিষেবা দেওয়ার কাজে গতি আনতে চাইছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। গত কয়েক বছর ধরেই প্রযুক্তির হাত ধরে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালিয়ে আসছে। এ বার সেই কাজে এক কদম এগোল এই জেলার গঙ্গাজলঘাটি ব্লক। প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দুরত্ব ঘোচাতে সম্প্রতি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে এই ব্লক প্রশাসন। নাম— নালিশ (nalish)।

Advertisement

এর আগে জেলা পুলিশকে ফেসবুক, হোয়াটস্‌অ্যাপ ব্যবহার করে জনসংযোগে নামতে দেখা গিয়েছে। জেলা পুলিশ নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করেও সাধারণ মানুষকে সেখানে অভিযোগ জানানোর সুবিধাও করে দিয়েছে। তবে গঙ্গাজলঘাটি ব্লক এ বার নিজস্ব একটি অ্যাপ বানিয়ে ফেলেছে। ইতিমধ্যে ওই অ্যাপ ‘নালিশ’-এ অভিযোগও আসতে শুরু করেছে।

বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এই কাজকে অভিনব পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ঠিক যে ভাবে বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়, এ ক্ষেত্রেও ‘গুগুল প্লেস্টোরে’ গিয়ে ‘নালিশ’ অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপ খোলার পরেই ‘কমপ্লেন’ ও ‘অ্যাডমিন’ দু’টি লেখা ফুটে উঠবে। সাধারণ মানুষ ‘কমপ্লেন’–এ ছুঁলে যে কোনও সমস্যা জানাতে পারেন। সেখানে সর্বাধিক চারটি ছবি ও তিন মিনিটের একটি ভিডিও এবং অডিও পোস্ট করে অভিযোগ জানাতে পারেন। এই অ্যাপে অভিযোগকারীর নিজের নাম বা মোবাইল নম্বর দেওয়া বাধ্যবাধকতামুলক নয়। প্রশাসনিক কাজকর্ম থেকে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা এই অ্যাপে জানানো যেতে পারে। যে কোনও দফতরের সমস্যাই এখানে জানানো যেতে পারে।

Advertisement

গঙ্গাজলঘাটি ব্লক অ্যাপে জমা পড়া অভিযোগ সম্পর্কে দেখভালের জন্য এক কর্মীকে নিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ জমা পড়লেই ১২ ঘণ্টার মধ্যে তা সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হবে। গঙ্গাজলঘাটি বিডিও মৃন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই অ্যাপে জমা পড়া অভিযোগগুলির মধ্যে শুধু মাত্র গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের সমস্যাগুলিকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।

চালু হওয়ার পরে গত কয়েকদিনে ১০টি সমস্যা এই অ্যাপে জমা পড়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি রয়েছে একশো দিনের প্রকল্পের জব কার্ড সংক্রান্ত ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প সংক্রান্ত সমস্যা। নালিশ জমা পড়েছে, কাজ কি হয়েছে? বিডিও বলেন, “ওই অভিযোগগুলি পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি পঞ্চায়েতে জব কার্ড দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই পঞ্চায়েতের প্রধানদের অবিলম্বে জবকার্ড দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছি।”

এতদিন এই সব সমস্যা জানাতে সাধারণ মানুষকে ছুটে আসতে হতো ব্লক অফিসে। দূরদুরান্ত থেকে ব্লক অফিসে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও বহু মানুষই সমস্যার কথা জানাতে পারেন না বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। তার উপরে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক বা কর্মীর দেখা পাওয়া যায় না বলে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে। সরকারি অফিস মানেই এইসব অভিযোগ ওঠে। সেই ছবিটাই এ বার ওই অ্যাপ বদলে দিতে চলেছে বলে অনেকের মত। বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালার কথায়, “গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের নিজস্ব অ্যাপ আশাকরি প্রশাসনিক কাজের ধারাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ জেলাশাসক মৌমিতাদেবী বলেন, “গঙ্গাজলঘাটি ব্লক প্রশাসন এখন সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয়। যে কোনও সমস্যা প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসা এখন কয়েক মিনিটের ব্যাপার।” তবে শুধু অ্যাপ চালু করলেই হবে না, সেখানে জমা পড়া অভিযোগগুলি নিষ্পত্তিতেও গুরুত্ব বজায় রাখাটা সমান জরুরি বলে জেলা প্রশাসনেরই কিছু আধিকারিক জানাচ্ছেন।

বস্তুত বিধানসভা নির্বাচনে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যবধান অনেকটাই ঘুচিয়ে ছিল নির্বাচন কমিশনের ‘সমাধান’ ও ‘সুবিধা’ নামের দু’টি অ্যাপ। ভোট ফুরলেও জনসাধারণ ও প্রশাসনের মাঝে মোবাইল অ্যাপ যে মজবুত সেতু গড়তে পারে, তা অবশ্য টের পেয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। সেই ভাবনা থেকেই গঙ্গাজলঘাটি ব্লক প্রশাসনের ওই উদ্যোগ।

প্রযুক্তিকে অবশ্য কাজে লাগিয়ে গতিশীল প্রশাসন পেতে আগেই নেমে পড়েছে বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতও। যেমন প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স চালু করেছে রাইপুর ও ওন্দা ব্লক প্রশাসন। বৈঠক করতে এই ব্লকের পঞ্চায়েত প্রধানদের আর বিডিও অফিসে ছুটে আসতে হয় না। এই দুই ব্লকেই ইন্টারনেট পরিষেবার সমস্যা ছিল।

তাও মিটেছে হাইস্পিড ইন্টারনেট সংযোগ চালু করে। আবার বাঁকুড়া ১ ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই ব্লকের বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে কর্মসংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটেছে অনেকটাই। কারণ এই পদ্ধতির ফলে পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মীরা কখন দফতরে আসছেন, কখন বেরিয়ে যাচ্ছেন তা সরাসরি বিডিও জানতে পারছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন