নোংরা শহর? বিতর্ক শুরু বাঁকুড়া সদরে

কেন্দ্রীয় সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের নোংরা শহরগুলির তালিকায় রয়েছে বাঁকুড়া। ইতিমধ্যেই ব্যাপারটা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। শহরের পুরপ্রধান এই সমীক্ষার রিপোর্ট মানতে নারাজ। তাঁর অভিযোগ, খতিয়ে না দেখেই ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা শহরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ‘মনগড়া’ রিপোর্ট বানিয়েছে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০০:৪৫
Share:

জঞ্জাল: কলেজমোড় থেকে কাটজুড়িডাঙা যাওয়ার রাস্তায় মিশন গার্লস স্কুলের সামনে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

কেন্দ্রীয় সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের নোংরা শহরগুলির তালিকায় রয়েছে বাঁকুড়া। ইতিমধ্যেই ব্যাপারটা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। শহরের পুরপ্রধান এই সমীক্ষার রিপোর্ট মানতে নারাজ। তাঁর অভিযোগ, খতিয়ে না দেখেই ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা শহরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ‘মনগড়া’ রিপোর্ট বানিয়েছে।

Advertisement

রিপোর্ট নিয়ে নানা জল্পনা দানা বাধছে শহরে বাসিন্দাদের মধ্যেও। শহরবাসীর একাংশের দাবি, বাঁকুড়া একশো শতাংশ পরিচ্ছন্ন নয় বটে, কিন্তু নোংরা শহরের তালিকার উপরের দিকে থাকার মতো পরিস্থিতি মোটেও নেই এখানে। আবার অনেকেরই বক্তব্য, যে শহরে এখনও মানুষ রাস্তার পাশে নালায় বসে প্রকাশ্যে শৌচ করেন সেটিকে আর যাই হোক পরিচ্ছন্ন বলা যায় না।

বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রের খবর, নোংরা আবর্জনা সংগ্রহ ও নষ্ট করা, খোলা আকাশের নীচে শৌচ করা, শহরের বাজারহাটের নোংরা ফেলার ব্যবস্থার মতো বেশ কিছু দিক ওই কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় খতিয়ে দেখা হয়েছে। বাঁকুড়া শহরের নোংরা আবর্জনা সংগ্রহ করা ও আবর্জনা নষ্ট করার পদ্ধতিগত বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়নি গত কয়েক বছরে। রোজ বিভিন্ন ওয়ার্ডের আবর্জনা শহরের ‘স্ট্যাগ পয়েন্টে’ জড়ো করে রাখা হয়। সেখান থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে কেশড়া এলাকায় পুরসভার নিজস্ব জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়। তবে বছর খানেক আগে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে দু’টি কম্প্যাক্টর পেয়েছে বাঁকুড়া পুরসভা। ওই যন্ত্রের সাহায্যে আবর্জনা মণ্ড বানিয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলা হচ্ছে।

Advertisement

শহরের বাসিন্দাদের কেউ কেউ আবার ‘স্ট্যাগ পয়েন্ট’ থেকে ময়লা তুলে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, খোলা ট্রাকে ময়লা তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায়ই চলন্ত ট্রাক থেকে ময়লা নীচে পড়ে। বাজার এলাকাগুলিতেও ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনও বন্দোবস্ত চোখে পড়ে না। অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা শহরের বেশির ভাগ বাজারেই নোংরা আবর্জনার জেরে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

বাঁকুড়ায় বাড়ি বাড়ি শৌচাগার বানানোর প্রকল্প শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও শহরের বেশির ভাগ বাড়িতেই শৌচাগার গড়ে তোলা যায়নি। লালবাজার, কেঠারডাঙা, কুচকুচিয়া রোডের মতো বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশের নালায় প্রকাশ্য দিনের আলোয় শিশু থেকে প্রবীণ— অনেকেই শৌচ করেন। লালবাজারের হিন্দুস্কুল মাঠ সংলগ্ন ফাঁকা এলাকায় দুর্গন্ধের চোটে নিঃশ্বাস নেওয়াই দায় হয় বলে অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের অনেকের।

যদিও গত কয়েক বছরে বাঁকুড়া শহরের চেহারা অনেকটাই বদলেছে বলে মানছেন শহরের বাসিন্দাদের অনেকে। শহরের রাজপথের একটা বড় অংশ দখলমুক্ত হয়েছে। এক সময়ে ওই পাশের দোকানগুলি থেকে নোংরা আবর্জনা ফেলা হত রাস্তার উপরে। এখন সেই দৃশ্য আর বিশেষ দেখা যায় না। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের দাবি, শহরের সাফাই কাজ নিয়ে পুরসভা সব সময়ে সচেতন রয়েছে। তিনি বলেন, “বাইরে থেকে অনেক মানুষ বাঁকুড়ায় এসে এখানকার পরিচ্ছন্নতার প্রশংসা করে যান। আমি জানি না কোন কেন্দ্রীয় সংস্থা এই সমীক্ষা চালিয়েছে। ওঁরা যদি শহর ঘুরে দেখে ওই রিপোর্ট বানাতেন তাহলে বাঁকুড়াকে নোংরা শহরের তকমা কখনও দিতেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন